ভাগ্য ফেরাতে সৌদি আরবে যাওয়া নারীদের ভাগ্যই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। শনিবার (১৯ মে) রাত ৯টায় আরও ৬৬ নারী শ্রমিক দেশে ফেরত এসেছেন। এদেরই একজন লাবনী (ছদ্মনাম)। দুই বছর আগে কাজের সন্ধানে সৌদি যান। এই সময়টা তাকে মোকাবিলা করতে হয়েছে বিরূপ পরিস্থিতির। তিনি বলেন, ‘যে বাড়িতে আমি ছিলাম সেখানে ১০টি রুম ঝাড়ু দিতে হতো। ঠিকমতো খাবার দিতো না। মালিক আমারে অত্যাচার করতো। চাকরি ছাড়তে চাইলেও আমারে ছাড়তে চায় নাই মালিক। ছাড়ার কথা বললে আরও বেশি মাইর দিতো।’
লাবনীর মতো প্রায় প্রতিদিনই নারী শ্রমিকরা দেশে ফিরছেন বলে জানিয়েছেন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কর্মীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা কর্মী জানান, তারা দেশে ফিরে এসেই কান্নাকাটি করেন। কেউ কেউ নিজ উদ্যোগে খাবার কিংবা আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করেন। অনেকের শরীরে জখমের চিহ্নও দেখেছেন তারা।
লাবনী জানান, দুই বছর আগে রিয়াদ যান তিনি। আসার পর তাকে প্রথমে ১৫ দিন একটি কারাগারের মতো জায়গায় রাখা হয়। এরপর তাকে ৭৭ কিলোমিটার দূরে আল খারজ শহরে নিয়ে যাওয়া হয়। বেতন বলা হয়েছিল এক হাজার রিয়াল। ৪ মাস সেখানে কাজ করেন। এই সময় তাকে পরিবারের সঙ্গে কোনও কথা বলতে দেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ‘সৌদি যাওয়ার জন্য মিরাজ নামের এক দালালকে ৬০ হাজার টাকা দিছিলাম। সে আমাকে বলছিল অনেক ভালো জায়গা। সৌদি যাওয়ার পর প্রথমে আমাকে এক মালিকের কাছে বিক্রি করা হয়। মালিকের অত্যাচারে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যাই। তখন আমারে ধরে একটা কোম্পানির মাধ্যমে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করে দেয়। আমার মতো আরও কয়েকশ মেয়ে আছে সেখানে। তাদের দিয়ে জোর করে দেহ ব্যবসা করানো হয়। আমি একবার সুযোগ বুঝে আমার স্বামীকে ফোন দিয়া সব বলি। তারপর আমাকে সৌদি দূতাবাসের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয়। আমার আগের মালিকের কাছে বেতন পাওনা ছিল। দূতাবাসের মাধ্যমে চাপ দিয়ে সেই টাকা পাইছি।’
ফেরত আসা আরেক নারী নাসিমা খাতুন। মাত্র দুই মাস আগেই তিনি সৌদি গিয়েছিলেন। এত অল্প সময়ের মধ্যে ফিরে আসার কারণ জানতে চাইলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘যাওয়ার পর আমারে ১৫ দিন আটকায় রাখছে। এক দালালের মাধ্যমে ১০ হাজার ট্যাকা দিয়া সৌদি আরব গেছিলাম। ১০০০ রিয়াল বেতন দেওয়ার কথা আছিল। বাসা বাড়ির কাম। প্রথম বাড়িতে মালিকের বউ অনেক মারতো। তাদের ভাষা বুঝতাম না। কাজের দেরি হইলেই লাঠি দিয়া মারতো। এরপর আমারে সেখান থেকে নিয়া আরেক জায়গায় দিছে। সেখানেও ঘরের কাজ। ছোট ফ্যামিলি বইলা আমারে পাঠায়ছিল কিন্তু গিয়া দেখি অনেক মানুষ পরিবারে। পরে সেখান থেকে পালায় যাই দূতাবাসে। এরপর আমারে দেশে পাঠায় দিছে। আমার পাসপোর্ট পর্যন্ত দেয় নাই, কোন ট্যাকাও দেয় নাই। আমি খালি হাতে ফিরছি।’