রাজধানীতে দৈনিক ৩০০ টাকা ভাড়ায় পাওয়া যায় স্বামী!

ঢাকায় দেহ ব্যবসায় বেশি বিবাহিত নারীরা!

রাজধানীর কুড়িল মোড়ের এক ফুটপাতের খুদে দোকানদার রিনা খাতুনের স্বামী নেই। আরেক বিয়ে করে স্বামী চলে গেছে। কোথায় গেছে সেটাও তার জানা নেই। তবে এই পক্ষের তার একটা ছেলে রয়েছে। ছেলেটি মাদ্রাসার লাইনে লেখাপড়া করে।

কাকলী-বনানী মোড়ে তিনটি সন্তান নিয়ে ফুটপাতে কখনো পিঠা, কখনো মৌসুমি ফল, সঙ্গে চা-পান বিক্রি করে জীবন চালান সিবলী বেগম। ছেলেকে চা-পানের দোকান আলাদা করে দিতে ৭ হাজার টাকার ঋণ দরকার তার। একটি এনজিও থেকে ঋণ পেতে স্বামী দরকার। এনজিওর লোকজন বলছে ঋণ পেতে হলে স্বামী-স্ত্রী দুজনের ছবি লাগবে। মাস কয়েক আগে এনজিওর ঋণ পেতে একজন স্বামী ভাড়া করেছিলেন তিনি। ঋণের টাকা তুলে তা থেকে ১ হাজার টাকা দিয়েছেন তাকে। মাত্র ১ হাজার টাকাতেই তার সঙ্গে স্বামী পরিচয়ে এনজিও অফিসে গিয়ে ছবি তুলে ঋণ পেতে সহায়তা করেছেন আলাউদ্দি নামের এক লোক।

অনেককিছু ভাড়ার পাশাপাশি এখন রাজধানীতে ভাড়ায় মিলছে এসব স্বামীও! এ বাণিজ্যে তিন ধরনের কাজের জন্য স্বামী পরিচয়ে পুরুষ ভাড়া করা হয় বলে জানা গেছে। স্বামী হিসেবে ভাড়ায় খেটে নিজের সংসার চালাচ্ছেন এমন চাঞ্চল্যকর তথ্যও পাওয়া গেছে। দিনে ৩০০ টাকা থেকে মাসে ৮-১০ হাজার টাকায় ভাড়ায় স্বামী পাওয়া যায়। আবার একই পুরুষ ভাড়ায় খাটেন একাধিক নারীর স্বামী পরিচয়ে এমন তথ্যও পাওয়া গেছে।

ঢাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে যৌনকর্মীদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওইসব যৌনকর্মী এখন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া নিয়ে হাই লেবেলে দেহ ব্যবসা শুরু করেছে। বাড়ি ভাড়া নিতে গেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বামী ছাড়া বাড়ির মালিক বাসা ভাড়া দিতে চান না। বাড়ি ভাড়া নেয়ার ওই প্রতিবন্ধকতার কথা চিন্তা করে যৌনকর্মীরা তাদের পূর্বপরিচিত কোনো পুরুষকে স্বামী হিসেবে ভাড়া করেন।

বাড়ি ভাড়া করার সময় সঙ্গে থাকেন ভাড়াটে স্বামী। দেখা গেছে, বাড়ি ভাড়া নেয়ার সময় বাড়ির মালিককে বলা হয় স্বামী নিয়মিত ঢাকায় থাকে না, বাইরের কোনো জেলায় চাকরি বা ব্যবসা করে। একই সঙ্গে বলা হয়, বাসায় নিয়মিত থাকবে তার স্ত্রী ও দুই বা তিন বোন। ওই বোনদের থাকার কথা বলে জায়েজ করে নেয়া হয় আরো দুই-তিনজন যৌনকর্মীকে। এভাবেই রাজধানীজুড়ে ফ্ল্যাট বাড়িগুলোতে চলছে যৌনবাণিজ্য।

বাড্ডার পলাশ (ছদ্মনাম) জামালপুর থেকে অভাবের তাড়নায় ঢাকায় আসেন। এসএসসিও পাস নয়, তাই কোনো চাকরি দিতে চাচ্ছেন না কেউ। এরই মধ্যে দেখা মিলে ছিনতাইকারী আজুলের সঙ্গে। নিরুপায় হয়ে তার সঙ্গে যোগ দেয় ফার্মগেট এলাকায় ছিনতাইয়ের কাজে। পরিবর্তন করে ফেলে নিজের বংশ-পরিচয়ও। এরই মধ্যে পরিচয় হয় স্বামী পরিত্যক্তা বিভিন্ন ছদ্মনামীদের সঙ্গে। তখন তিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির পাশাপাশি যৌন ব্যবসায় লিপ্ত ছিলেন।

See also  নারায়ণগঞ্জ আবাসিক হোটেল ও পতিতালয়ের দেহ ব্যবসা ভিডিও । নামকরনের ইতিহাস । Narayanganj Deh bebsa

সিদ্ধান্ত হয় স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে দুজন রাজধানীর সবুজ এলাকায় ও শনির আখড়ায় বসবাস করবেন। এর পরই বিউটি পার্লার ব্যবসার আড়ালে রুপা শুরু করে জোরালো যৌনব্যবসা। এমন হাজার হাজার বিভিন্ন পরিকল্পনায় এ ব্যবসা চলছে। এ ছাড়াও, সোহান রাজধানীর শান্তিনগর, বাড্ডা, ফার্মগেট এলাকাসহ ৮-৯টি স্থানে যৌনকর্মীদের স্বামী পরিচয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে নিজে কামায় মোটা অঙ্কের টাকা। আর মাঝেমধ্যে খদ্দের জোগাড় করে দিলে তার কমিশন তো আছেই।

রাজধানীতে তিন ধরনের কাজের জন্য মহিলাদের স্বামী পরিচয়ে পুরুষ ভাড়া করার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা গেছে। বিশেষ করে যৌনব্যবসার সঙ্গে জড়িত নারীরা বাসা ভাড়া নেয়ার সময়, স্বামী হিসেবে লোক ভাড়া করে বাড়ির মালিককে দেখিয়ে থাকেন তারা। এনজিওসহ বেশকিছু মাল্টিপারপাস কোম্পানি থেকে ক্ষুদ্রঋণ নেয়ার শর্ত হিসেবে স্বামীর পরিচয় ও বউ পরিচয় দেয়া হয়।

এছাড়া, সম্প্রতি পাসপোর্ট অফিসে কোনো মহিলা স্বামী ছাড়া একা গেলে তাকে স্বামীর উপস্থিতি দেখানোর প্রয়োজনে স্বামী ভাড়া করে আবার স্বামী নিয়ে আসার ঝামেলা থেকে মুক্ত হতে হয়।

অনুসন্ধানে একই ব্যক্তির তিন-চারটে ফ্ল্যাট বাড়িতে স্বামীর পরিচয়ে ভাড়া খাটার বিষয়টি জানা গেছে। অপরপক্ষে ভাড়াকৃত স্ত্রীরাও ৪-৫ জায়গায় বাসা ভাড়া নেয়। এমনই একজন সালাউদ্দিন। যে কিনা ছয় নারীর স্বামী হিসেবে ভাড়া খাটেন। ভাড়া খাটার শর্ত হচ্ছে সপ্তাহে কমপক্ষে একদিন স্বামী পরিচয়ে বাসায় অবস্থান করতে হবে, আর বাসার বাজারও করে দিতে হবে। বাসায় অবস্থান করা ও বাজার করার শর্ত দেয়ার মানে হচ্ছে যাতে আশপাশের লোকজন কোনো প্রকার সন্দেহ না করেন।

এদিকে, নার্গিস নামের এক মেয়ের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তিনি বাইং হাউজের কাজ করেন গ্রামের বাড়িতে বাবা-মাকে সেটি বলেছেন। কিন্তু আসলেই তিনি বাইং হাউজের নামে যৌন ব্যবসা করেন। একটি ফ্ল্যাটে প্রতিদিন চাকরির কথা বলে বাসা থেকে বের হন এরপর কোনোদিন বাসায় ফেরেন আবার কোনো সময় ফেরেন না।

See also  খাগড়াছড়ির যেসব আবাসিক হোটেলে অবৈধ দেহ ব্যবসা চলে | Khagrachari Abasik Hotel

জামালপুরের মধ্যবয়সী পুরুষ সালাউদ্দিন ও শেরপুরে সুমন হোসেন প্রায় এক যুগ আগে ঢাকায় এসে মিরপুর এলাকায় পান-সিগারেটের ব্যবসা শুরু করেন। ধীরে ধীরে জড়িয়ে যান এক সন্ত্রাসী চক্রের সঙ্গে। ধরা পড়ে জেলও খাটেন দেড় বছর। জেল থেকে বেরুনোর পর পরিচয় হয় এক মহিলার সঙ্গে। সেই থেকে ভাড়ায় স্বামীবাণিজ্য শুরু সালাউদ্দিনের। এখন রাজধানীর মিরপুর, বাড্ডা ও গাবতলী এলাকায় ছয়টি বাসায় ছয় নারীর ভাড়াটে স্বামী তিনি। ভাড়া পান ৩০-৪০ হাজার টাকা। কোনো মাসে বেশি পান আবার কোনো মাসে কিছুটা কমও পান এমনটাই জানান সালাউদ্দিন।

সালাউদ্দিন নিজের স্ত্রী ও এক ছেলে নিয়ে ভাড়ায় থাকেন মিরপুরের কালসী এলাকায়। ভাড়ায় স্বামী খাটাই এখন তার একমাত্র পেশা বলে জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাম্প্রতিককালে আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য ছবি তুলতে অফিসে যেতে হয়। অজ্ঞতাপ্রসূত কোনো নারী একা পাসপোর্টের ছবি তুলতে গেলে তাকে স্বামী সঙ্গে রাখার কথা বলা হয়। সেই ক্ষেত্রে মহিলা পাসপোর্ট প্রত্যাশীকে সময় ব্যয় করে আরেকদিন আসতে হয় অথবা অন্য একদিন যেতে হয়। মহিলারা ফিরে যাওয়ার সময় এখানকার কিছু দালাল সুকৌশলে মহিলাদের প্রস্তাব দেন, টাকা-পয়সা খরচ করে আবার আসবেন। তারচেয়ে মাত্র ৫০০ টাকা খরচ করেন। আমি একজন লোক দিচ্ছি, উনি আপনার সঙ্গে যাবেন এবং মাত্র কয়েক মিনিটের জন্য উনাকে স্বামী পরিচয় দেবেন। ছবিটা তোলা হলে চলে যাবেন।

এদিকে, স্বামী বাণিজ্য এগিয়ে আছে ভাষানটেক, কুড়িল বিশ্বরোড এলাকা, বাড্ডা, ভাটারা, সবুজবাগ, গাবতলী, সায়দাবাদ, সদরঘাট সহ রাজধানীর বিভিন্ন শেষ সিমানা এলাকাতেই বেশিরভাগ স্বামী-স্ত্রী বাণিজ্য চলে।

জানা গেছে, রাজধানীতে বিভিন্ন ক্ষুদে ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বেশিরভাগ বস্তিবাসী বা ভাসমান নারীরা উদয়-অস্ত পরিশ্রম করে সন্তানদের নিয়ে জীবন ধারণ করছেন। তাদের বেশির ভাগই স্বামী পরিত্যক্তা। ব্যবসা পরিচালনা বা সম্প্রসারণের কারণে কখনো কখনো এদের ক্ষুদ্রঋণের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এনজিওগুলো বা নগরীতে সুদের ব্যবসা করে এমন সংস্থাগুলো ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রী দুজনের ছবি ও নাম ব্যবহার করে এবং দুজনকেই ঋণের দায়ে আবদ্ধ রাখেন।

See also  চাঁপাইনবাবগঞ্জ আবাসিক হোটেল দেহ ব্যবসা,নামের ইতিহাস ও রহনপুর মিনি পতিতালয় | Chapainawabganj Abasik

এমন ব্যবসার জন্য বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন কড়াইল বস্তিতে অনেকে মাদক ও যৌন ব্যবসায়ীরা। এ এলাকার স্থানীয় ১৯ নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ নেতা গনি মিয়াকে যৌন অভিযোগের কারণে এক পতিতা তার নামে মামলা করেন। এরপর পুলিশ সজাগ থাকায় বেলতলা বস্তিতে এমন ঘটনা এখন আর নাই। তবে কড়াইল বস্তির বিভিন্ন স্থানে এ ব্যবসা চলছে। ওই পতিতা এভাবেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়। এবং পরবর্তীতে পতিতা মোটা অঙ্কের টাকার দাবি করে থাকে।

বর্তমান রাজধানীতে স্বামী বাণিজ্য চলে বনশ্রী গুলশান বনানী ধানমন্ডি নতুন বাজার বাড্ডা কুড়িল বিশ্বরোড, খিলক্ষেত, খিলগাঁও বাসাবো রাজধানীর বেশ কয়েকটি জায়গায় স্বামী স্ত্রীর ভাড়ার এই বাণিজ্য চলে।

এনজিওগুলোর এ নিয়মের কারণে স্বামী পরিত্যক্তাদের ক্ষুদ্রঋণ পাওয়ার সুযোগ থাকে না। সে ক্ষেত্রে বাধ্য হয়ে পরিচিত এবং ভালো সম্পর্ক আছে এমন কাউকে স্বামী হিসেবে ভাড়া করে সংস্থাগুলো থেকে ব্যবসার ঋণ পান মহিলারা। বিনিময়ে ভাড়াটে স্বামীকে ধরিয়ে দিতে হয় নগদ কিছু টাকা। আবার জানা গেছে, অনেকে কেবল ভালো সম্পর্কের কারণে বিনা টাকায় মহিলাদের ঋণ পেতে সহায়তা করেন তবে বিনিময় অন্য কিছু।

ডিবি পুলিশের এক কর্মকতা জানান, আমাদের দেশের রাজধানী ঢাকা। এখানে বসবাসের অন্যতম জায়গা। লক্ষ লক্ষ লোক এ শহরে বসবাস করে। এতো লোকের মাঝে যারা এসব কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনত ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকি। তবে যদি কেউ গোপনে এসব কাজ করে তাহলে তাদের শনাক্ত করে আমরা আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করব।

ডিএমপি হেড কোয়াটার্সের এক অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এসব ব্যবসা ও বিভিন্ন অপরাধ আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। এক হিসেবে নেই বললেই চলে। তার কারণ হলো এসব অপরাধীদের ধরতে আমাদের পুলিশ সদস্যরা এটি দমনের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে। তবে বতর্মানে যদি কেউ চুরি করে এসব অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয় তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Source:: https://www.bdmorning.com/