সৌদি আরবে দেহ ব্যবসার ফাঁদ (সাবধান সবাই)

চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে নারীদের সৌদি আরবে নিয়ে যায় সৌহিল চৌধুরী ওরফে সোহেল নামে এক প্রতারক। সৌদিতে গৃহকর্মী বা ভালো বেতনের চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে প্রতারণার জাল পাতে সোহেল ও তার চক্র। আর এভাবেই মিথ্যা কথার প্রতিশ্রুতিতে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়ে করানো হয় অনৈতিক কাজ। সমপ্রতি সৌদি আরবে অবস্থানরত দালাল সোহেলের জিম্মিদশা থেকে কুলসুম (৩৫) (ছদ্মনাম) নামে এক নারী পালিয়ে আসলে বের হয়ে আসে এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য। কুলসুমের বাড়ি হালুয়াঘাট উপজেলার দক্ষিণ মনিকুড়া গ্রামে। শুধু কুলসুম নয়, তার মতো আরো ৩০/৩৫ জন নারী সৌদিতে সোহেল চৌধুরীর ফাঁদে পড়ে দিনের পর দিন সম্ভ্রম হারাচ্ছে। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে বাধ্য হয়েই মেনে নিতে হচ্ছে সকল অপকর্ম। কুলসুম জানান, ২৩ বছর যাবৎ এভাবেই প্রতারণা করে যাচ্ছে সোহেল চৌধুরী। দিনের পর দিন এইসব অপকর্ম করে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। সোহেল চৌধুরীর প্রকৃত ঠিকানা প্রকাশ করে না কখনো। কখনো বলে কুমিল্লার মুরাদনগর, আবার কখনো বলে চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। তবে সৌদি আরবে অবস্থানরত সোহেল চৌধুরীর পরিচিত শাহিনুর (৩৫) নামে একজন মুঠোফোনে বলেন, সোহেলের বাড়ি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে। শাহিনুর বলেন, সোহেল চৌধুরী সৌদি আরবের জেদ্দায় বাওয়াদিনু হাইয়ালুজা আমীর সুলতান মাদ্রাসার কাছে ভাড়া বাসা নিয়ে অবস্থান করে। সেখানে ঐ প্রতারকের আরো ৪টি বাসা ভাড়া নেয়া আছে। এসব বাসায় নারীদেরকে রেখে অপকর্ম করায় সোহেল। তবে কুলসুম বাংলাদেশে পালিয়ে আসার পর সোহেল চৌধুরী বাসা ছেড়ে পালিয়েছে- এমনটা জানান সৌদিতে অবস্থানকৃত শাহিনুর।

প্রতারণার শিকার কুলসুম জানান, গত ১৭ই ফেব্রুয়ারি মতিঝিল ফকিরাপুলের মেসার্স বাইতুল্লাহ ওভারসিজ নামক এজেন্সির (লাইসেন্স নং-আর.এল ১০২৩) মাধ্যমে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। এজেন্সির মূল হোতা মো. লোকমান হোসেন। অফিসের ঠিকানা ফকিরাপুলের ডি.আই.টি এক্সটেনশন রোডের জি ন্যাট টাওয়ারের ৬/১ ১১৬-১১৭-এর ৭ম তলায়। কিন্তু স্বপ্ন যে দুঃস্বপ্নে পরিণত হবে জানা ছিল না তার। সৌদি আরবে পাড়ি দেয়া মাত্রই লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ভাগ্য পরিবর্তনের কাজে যাওয়া কুলসুমের। তাকে বাধ্য করানো হতো নানা অপকর্মে। কুলসুমের অভিযোগ, এ চক্রের সঙ্গে জড়িত লোকমান হোসেন ও দালাল সোহেল চৌধুরীসহ একটি সিন্ডিকেট চক্র। সোহেল চৌধুরীর হাতে সৌদি আরবে ইতিমধ্যে জিম্মি রয়েছে আরো ৩০/৩৫ জন নারী। তাদেরকে দিয়েও করানো হয় বিভিন্ন অসামাজিক কাজ। প্রতি রাতেই করতে হয় খদ্দেরদের মন জয়ের চেষ্টা। কুলসুমকে কীভাবে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখলো- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, উত্তরার একটি বাসায় স্বামী-সন্তান নিয়ে ভাড়া থাকতেন। সেখানে একটি প্রাইভেট স্কুলে নিজ সন্তানকে পৌঁছে দিতে প্রতিদিন যেতে হতো। এরই মাঝে পিছু নেয় এক অপরিচিত নারী। আস্তে আস্তে ঐ নারীর সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে কুলসুমের। এক পর্যায়ে বিদেশ নেয়ার লোভ দেখায়। নিজের ভাই সৌদিতে থাকে এমন প্রস্তাব দিলে নিজের কষ্ট লাঘবের কথা চিন্তা করে রাজি হয়ে যায় কুলসুম। প্রতারক সোহেলকে নিজের আপন ভাই পরিচয় দিয়ে ফোনে কথা বলায় কুলসুমকে। পরে কুলসুমের সঙ্গে বেশ কিছুদিন কথা বলে ফকিরাপুলের ঐ এজেন্সির ঠিকানা দেয়। ঠিকানা মতো গিয়ে পাসপোর্ট জমা দিতে বললে এজেন্সির লোকমানের নিকট পাসপোর্ট জমা দেন কুলসুম। কোনো টাকা ছাড়াই সকল কাগজপত্র ও ফ্লাইট প্রস্তুত করে দেন লোকমান। আর ১৭ই ফেব্রুয়ারি বিমানযোগে সৌদিতে পৌঁছামাত্রই শুরু হয় তার ভাগ্য বিড়ম্বনা। কুলসুমের ভগ্নিপতি সাইফুল (৫৫) বলেন, সৌদিতে কুলসুম গিয়েছে তা কুলসুমের পরিবারের কেউ জানতো না। সৌদিতে পৌঁছার পর কুলসুম ফোন দিয়ে নির্যাতনের কথা জানিয়ে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান তার দুলাভাইয়ের কাছে। দালাল সোহেল আড়াই লাখ টাকা দাবি করে কুলসুমের পরিবারের কাছে। এক পর্যায়ে সাইফুল তার ঘর বন্ধক দিয়ে দুই লাখ টাকা দেন এজেন্সির লোকমানের কাছে। তারপরেও ফিরিয়ে দেয়নি সোহেল। দীর্ঘ আট মাস নির্যাতন ভোগ করার পর সৌদিতে অবস্থানকৃত একজনের সহযোগিতায় পালিয়ে গত ২৭শে সেপ্টেম্বর দেশে ফিরেন। কুলসুমের সৌদি যাওয়ার ঘটনা জানতে চাইলে মুঠোফোনে এজেন্সির লোকমান হোসেন বলেন, সোহেল চৌধুরী কুলসুম (ছদ্মনাম) কে আমার কাছে পাঠায়। আমি শুধুমাত্র (ছদ্মনামী) ফ্লাইট ও কাগজপত্র তৈরি করে দিয়েছি। আর ভিসাসহ যাবতীয় প্রসেসিং সোহেল চৌধুরী করেছে। কুলসুম সৌদিতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে তা তিনি সৌদি ফেরত কুলসুমের পরিবারের কাছে শুনেছেন বলে দাবি লোকমানের। প্রতারক সোহেল চৌধুরী চাঁদপুরের মতলব উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের শাহালম চৌধুরীর পুত্র- এ তথ্য জানিয়েছেন এজেন্সির লোকমান হোসেন।

See also  সৌদি আরবে নিয়ে দেহ ব্যবসা

Source : Manob Zamin