এরপর বেরিয়ে আসে ভয়াবহ তথ্য। তবে এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন মূলহোতা হোটেলের তিন মালিক। হোটেল মালিক রফিকুল ইসলাম, শাহিনুল হক ও আসাদুজ্জামান ভূঁইয়া মূলত এসব ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইলের পরিকল্পনা করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় অবস্থিত এই আবাসিক হোটেলে ওই দম্পতি ছাড়াও অন্তত ৪০ জনের গোপন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করেছিলেন হোটেল মালিকরা। তবে শেষ পর্যন্ত দুটি ভিডিওর প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ। মীমাংসার নামে কৌশলে টাকা নিয়ে মুঠোফোন থেকে ওসব ভিডিও ডিলিট করেছেন হোটেল মালিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২৯ জানুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী তার স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য গ্রাম থেকে রাজশাহীতে নিয়ে আসেন। ওই দিন রাতে হোটেল পপুলার-২-এ ওঠার পর তাদের মুঠোফোনে কল করে বাইরে আসতে বলা হয়। তারা বাইরে না এলে হোটেলের দরজায় ধাক্কাধাক্কি করতে থাকেন ব্যবস্থাপক ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে ওই দম্পতি দরজা খুললে তাদের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন তারা। পরে ৫০ হাজার টাকা দিলে ভিডিও ডিলিট করে দেবে বলে জানান। টাকা না দিলে গোপনে ধারণ করা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এ অবস্থায় ওই দম্পতি হোটেল থেকে চলে যান। তারা রাজশাহী স্টেশনে রাত কাটান। পরদিন সকালে স্ত্রীকে বাড়ির উদ্দেশে ট্রেনে তুলে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান শিক্ষার্থী। দুপুর থেকে ওই শিক্ষার্থীকে হোটেলের কর্মচারীরা কল করতে থাকেন। তাদের কাছে অনেক ভিডিও রয়েছে দাবি করে দেখা করতে বলেন।
ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি তার বিভাগের এক ভাইকে জানান। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক নেতা ও স্থানীয় সাংবাদিককে বিষয়টি জানান। পরে তারা হোটেল মালিককে বিষয়টি জানিয়ে প্রতিকার চান।
তখন হোটেল মালিকরা মীমাংসার জন্য ডাকেন তাদের। এরপর হোটেল মালিক, রাজপাড়া থানা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাসহ ভুক্তভোগী হোটেলের পাশে একটি বেসরকারি স্কুলে যান। সেখানে ছাত্রলীগ নেতাদের তোপের মুখে সবার সামনে নিজের অপরাধ স্বীকার করেন ভিডিও ধারণকারী এক যুবক। সেইসঙ্গে ওই যুবক সবার সামনে ঘটনার মূলহোতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে হোটেল মালিকদের কথা জানান। এ পর্যন্ত ৪০ জনের ভিডিও ধারণের বিষয়টি জানান যুবক। ধারণকৃত ভিডিওগুলো হোটেলের এক মালিকের মোবাইলে ছিল। টাকা নিয়ে তিনি সেগুলো ডিলিট করেছেন। অথচ তাকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
এ বিষয়ে রাজশাহী আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার হাসান কবীর বলেন, ‘এমন কোনও হোটেলের নাম আমি এর আগে শুনিনি। ওই হোটেল নিবন্ধিত কিনা তাও জানি না। এসব তো প্রশাসনের দেখার কথা। আমাদের সংগঠনে ওই জাতীয় হোটেল মালিকদের রাখি না।’
এ বিষয়ে রাজপাড়া থানার ওসি এ এস এম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘এ ঘটনায় হোটেল মালিকসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ব্যবস্থাপক ও অরেকজনকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা মুঠোফোনে গোপন দুটি ভিডিও পাওয়া গেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা গোপনে ভিডিও ধারণ ও ব্ল্যাকমেইল করার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। এ কারণে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়নি। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’
গ্রেফতার দুজন হলেন- হোটেলের ব্যবস্থাপক শরিফ উদ্দিন (২৮) এবং হোটেলবয় আব্দুল নূর (১৯)। শরিফ উদ্দিনের বাড়ি নওগাঁর পোরশায়। আব্দুল নূরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে..
Source: BanglaTribune news