সন্তানের সাথে ভালো সম্পর্ক যেভাবে গড়ে তুলবেন

প্যারেন্টিং এমন এক অভিজ্ঞতা যা কখনো রোমাঞ্চকর অভিযান, আবার কখনো প্রতিদিনের ধাঁধার মতো মনে হয়। যত বই, ব্লগ বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শই অনুসরণ করুন না কেন, একটাই প্রশ্ন সবসময় মনে ঘুরপাক খায়: আমি কি আমার সন্তানের সঙ্গে যথেষ্ট সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারছি?

 

আজকাল সন্তানেরা একটু বেশি স্বাধীনতা চায় এবং তারা যেন একটু বেশিই সংবেদনশীল। তাই খুব সহজেই ঘটে যায় নানা বিপত্তি। সন্তানকে সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা বাবা-মা’র জন্য আরো কঠিন হয়ে পড়ে। এমন বাস্তবতায় এখানে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো—

১. সক্রিয়ভাবে শুনুন।

সন্তানের সঙ্গে বন্ধন দৃঢ় করার সবচেয়ে সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হলো সক্রিয়ভাবে শোনা। এটি শুধু কানে শোনার বিষয় নয়; বরং ফোন দেখা বা আনমনে মাথা নাড়ানোর পরিবর্তে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেওয়ার ব্যাপার। মনোবিজ্ঞানে সক্রিয় শ্রবণকে কার্যকর যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়। এটি শিশুকে বুঝতে সাহায্য করে যে তারা গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান এবং বোঝার যোগ্য। যখন আপনার সন্তান তাদের প্রিয় সুপারহিরো বা রাতের স্বপ্ন সম্পর্কে বলতে চায়, চোখের দিকে তাকিয়ে শুনুন। তাদের কথা পুনরাবৃত্তি করুন বা সংক্ষেপে বলুন। এই মনোযোগ তাদের অনুভব করাবে যে আপনি সত্যিই তাদের কথায় আগ্রহী।

See also  ভালো মাল পাওয়া যায় কোন জায়গায়

 

২. একসঙ্গে শখ গড়ে তুলুন।

শিশুরা অন্যদের সঙ্গে কার্যকলাপে অংশ নিয়ে সম্পর্ক সম্পর্কে শেখে। মনোবিজ্ঞানীরা একে “যৌথ সম্পৃক্ততা” বলেন, যা ইতিবাচক মানসিক সংযোগ তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি কুকি বানান, আপনার সন্তান ডিম ভাঙতে পারে আর আপনি ময়দা মাখতে পারেন। তারা যদি সংগীত পছন্দ করে, তাহলে একসঙ্গে কোনো ডকুমেন্টারি দেখুন বা বাড়িতে ক্যারাওকে নাইট করুন। এই ধরনের কাজ একসঙ্গে করা স্বাভাবিক ও আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরি করে।

 

৩. নিয়মিত রীতি ও ঐতিহ্য গড়ে তুলুন।

শোবার সময় গল্প বলা, নির্দিষ্ট দিনে সকালে হাঁটা— এসবই শিশুদের জন্য আবেগগত নিরাপত্তার অনুভূতি তৈরি করে। আমার পরিবারে, আমরা প্রতি রবিবার দুপুরে একসঙ্গে চা পান করি। এতে কোনো চাপ নেই, কোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইস নেই, শুধু সময় উপভোগ করি। এটি আমাদের ব্যস্ত জীবনের মধ্যে প্রশান্তির মুহূর্ত এনে দেয়।

 

৪. আত্মপ্রকাশকে উৎসাহিত করুন।

শিশুরা নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করার উপায় খুঁজে পেলে মানসিকভাবে ভালো থাকে। একসঙ্গে জার্নাল রাখা: আপনার সন্তান এবং আপনি একসঙ্গে একটি ডায়েরি রাখতে পারেন যেখানে উভয়েই ছবি আঁকতে বা কিছু লিখতে পারেন। শৈল্পিক প্রকাশ: রং করা, ছবি আঁকা, মাটির মডেল তৈরি করা— যেকোনো সৃজনশীল মাধ্যমকে উৎসাহ দিন।

See also  T20 World Cup 2021 official Anthem Theme Song mp3 Download

 

৫. ধারাবাহিক ও নির্ভরযোগ্য থাকুন।

শিশুরা যখন জানে কী আশা করা যায়, তখন তারা নিরাপদ বোধ করে। যদি আপনি বলেন, “বিছানায় যাওয়ার আগে আমরা ১৫ মিনিট খেলবো,” তবে সেটি পালন করুন। প্রতিদিনের চেক-ইন অভ্যাস গড়ে তুলুন: “আজকের দিনে তোমার সবচেয়ে ভালো লাগার মুহূর্ত কী ছিল?”

 

৬. ভালোবাসার ভাষা বুঝুন।

ড. গ্যারি চ্যাপম্যানের মতে, ভালোবাসার পাঁচটি ভাষা আছে— শব্দের প্রশংসা, সেবা, উপহার, গুণগত সময়, শারীরিক স্পর্শ। আমার সন্তান প্রশংসামূলক শব্দ শুনতে ভালোবাসে। তাই আমি তাদের বলি, “আমি গর্বিত তুমি কতটা সাহসী ছিলে” বা “তোমার চিন্তার ধরনটা দারুণ।”

 

৭. একসঙ্গে কৃতজ্ঞতা চর্চা করুন।

গবেষণা বলে, নিয়মিত কৃতজ্ঞতা চর্চা করা মানুষকে সুখী, আশাবাদী ও সংবেদনশীল করে তোলে। কৃতজ্ঞতার জার: একটি জার রাখুন যেখানে সবাই ছোট্ট নোট লিখে ফেলতে পারে যে তারা কিসের জন্য কৃতজ্ঞ।

রাতের ধ্যান: ঘুমানোর আগে জিজ্ঞাসা করুন, “আজকের দিনে কোন তিনটি জিনিস তোমাকে খুশি করেছে?”

See also  সৌদি আরব রেস্টুরেন্ট ভিসা বিস্তারিত তথ্য

 

৮. ভারসাম্যপূর্ণ শৃঙ্খলা বজায় রাখুন।

শিশুকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা মানে তাদের শাস্তি দেওয়া নয়, বরং তাদের জন্য কাঠামো ও দিকনির্দেশনা তৈরি করা। শান্তভাবে ব্যাখ্যা করুন কী ভুল হয়েছে এবং কীভাবে এটি ঠিক করা যায়।

তাদের বিকল্প দিন: “তুমি এখন পড়াশোনা করে পরে খেলতে পার, নাকি আগে কাজ শেষ করবে?”

 

৯. সহানুভূতি ও আবেগীয় বুদ্ধিমত্তাকে গুরুত্ব দিন।

আপনার সন্তানের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করুন। তাদের আবেগের নামকরণ করুন: “তুমি কি এখন রাগান্বিত না কি হতাশ?” নিজের অনুভূতি শেয়ার করুন: “আমি আজ একটু ক্লান্ত লাগছে, কিন্তু তোমার সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।”

 

১০. একান্ত সময় দিন।

যত ব্যস্ততাই থাকুক, আপনার সন্তানের জন্য একান্ত সময় বের করুন। ক্ষুদ্র মুহূর্তকেও কাজে লাগান— যেমন একসঙ্গে বাজারে যাওয়া বা রাতে গল্প বলা।

আমাদের ভবিষ্যত সবসময় আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু আমরা আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারি। আর সেটি গড়ে ওঠে এই ছোট ছোট সংযোগের মুহূর্তগুলোর মধ্য দিয়ে।

______________

সূত্র: দৈনিক জনকণ্ঠ