সংসার জীবন শুরুর আগে যে ৪৫টি বিষয় আপনার খেয়াল রাখতে হবে

সংসার জীবন শুরুর আগে যে ৪৫টি বিষয় আপনার খেয়াল রাখতে হবে

সংসারজীবন শুরু করেছেন যারা!

১. স্ত্রী হিসেবে স্বামীকে পরিবারের প্রধান এবং স্বামী হিসেবে স্ত্রীকে পরিবারের প্রাণ ও মূল চালিকাশক্তি মনে করুন।

২. বিবাহিত জীবনের সুখ-শান্তি ও মমতা ধরে রাখুন পারস্পরিক সম্মান, বিশ্বস্ততা ও সহযোগিতা দিয়ে।

৩. গৃহস্থালি কাজে স্ত্রীকে সহযোগিতা করুন। এটি স্ত্রীর প্রতি আপনার ভালোবাসারও বহিঃপ্রকাশ।

8. স্বামী/স্ত্রীর সাথে বিরক্তি নিয়ে বা নিস্পৃহ ভঙ্গিতে কথা বলবেন না।

৫. স্বামী/স্ত্রীকে আদেশের সুরে কিছু করতে বলবেন না। একে অপরকে প্রতিপক্ষ মনে করবেন না। আক্রমণ করে কথা বলবেন না।

৬. অন্যদের সামনে কখনোই স্বামী/স্ত্রীকে হেয় করবেন না।

৭. অন্যের স্বামী/স্ত্রীর সাথে নিজের স্বামী/স্ত্রীর তুলনা করবেন না।

৮. স্বামী/স্ত্রীর ব্যাপারে অহেতুক খুঁতখুঁতে হবেন না। কঠোর ভাষায় তার ভুল ধরিয়ে দেবেন না। ভুলগুলোকে সময়-সুযোগমতো সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিন।

৯. স্বামী/স্ত্রীর সাথে মনে মনে তর্ক করবেন না। পরস্পরের প্রতি অশ্রদ্ধা পোষণ করবেন না। মানুষ যা চিন্তা করে, না চাইলেও তার প্রকাশ ঘটে কথা ও আচরণে।

১০. পরস্পরের কাছ থেকে প্রতিদান প্রত্যাশা করবেন না। দায়িত্ব পালন করে যান, প্রতিদান স্রষ্টা দেবেন।

১১. নববধূ ও আপনার পরিবারের পক্ষ থেকে পারস্পরিক কোনো অনুযোগে নিষ্ক্রিয় থাকবেন না, এড়িয়ে যাবেন না। স্বামী হিসেবে স্ত্রী ও আপনার পরিবারের মধ্যে সবসময় সেতুবন্ধন তৈরির চেষ্টা করুন।

১২. দুই পরিবারের রুচি, অভ্যাস, চিন্তাভাবনা, আচরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে পার্থক্য থাকতেই পারে। এগুলোর ব্যাপারে উদার ও নমনীয় হোন। নিজেদের মধ্যে বোঝাপড়াটা ঠিক করুন। তাহলেই দ্বন্দ্ব-সংঘাত কমতে থাকবে।

See also  অন্যের বাসায় বেড়াতে গিয়ে যে ৯টি কাজ কখনোই করবেন না

১৩. কিছু ব্যক্তিগত অভ্যাস রয়েছে, যা আরেকজনের পছন্দ না-ও হতে পারে। ক্ষতিকর অভ্যাস হলে তা পাল্টানোর জন্যে উদ্বুদ্ধ করুন। আর ক্ষতিকর না হলেও কেন সেগুলো আপনার পছন্দ নয় তা একে অপরকে শান্তভাবে বুঝিয়ে বলুন। কখনোই এ নিয়ে পরস্পরের পরিবারকে দোষারোপ করবেন না।

১৪. দুই পরিবারের অভিভাবক ও সদস্যদের মধ্যে সুন্দর ও আন্তরিক সম্পর্ক দাম্পত্য জীবনকে অনেক ভুল ও সমস্যা থেকে বাঁচাতে পারে। তাই ছেলেপক্ষের অবস্থান উঁচুতে আর মেয়েপক্ষের অবস্থান নিচুতে- এমন না ভেবে পরস্পরকে সম-অবস্থানে রাখুন। এতে সম্পর্ক সুন্দর থাকবে।

১৫. স্বামী/স্ত্রীর অসুস্থতায় আন্তরিকভাবে সেবা করুন। দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। কী খেতে ইচ্ছে করছে বা কী প্রয়োজন তা জেনে নিয়ে ব্যবস্থা করুন। অসুস্থ থাকাকালে তার অসহিষ্ণু মেজাজের বিপরীতে আপনি শান্ত-সহনশীল আচরণ করুন।

১৬. অনৈতিক বা অকল্যাণকর না হলে স্বামী/স্ত্রীর পারিবারিক প্রথার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং তাতে অংশ নিন।

১৭. ‘আমার বাবা বিষয়টিকে এভাবে দেখতেন/আমার মা এভাবে করতেন’- এ ধরনের তুলনা না করে নিজেদের মতো করে ভাবতে শিখুন।

১৮. বিবাহ-পূর্ব প্রত্যাশা এবং বিবাহ-পরবর্তী বাস্তবতার মধ্যে ব্যবধান যত বেশি হবে দাম্পত্য সুখ তত কমতে থাকবে। তাই প্রত্যাশাকে যুক্তিসঙ্গত রাখুন, বাস্তবতাও সহনশীল থাকবে।

১৯. স্বামী/স্ত্রীকে কখনো শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করবেন না। এটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ।

২০. আপনাকে ভুল বুঝতে পারেন- এমন কোনো কথা ও তথ্য স্বামী/স্ত্রীকে জানানোর আগে আবার ভাবুন।

২১. অনুমতি ছাড়া স্বামী/স্ত্রীর মোবাইল ফোন, ডায়েরি, চিঠি খুলে দেখবেন না। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত গোপনীয়তাকে শ্রদ্ধা করুন।

২২. নেতিবাচক আবেগে মন তিক্ত হওয়ার আগেই সুযোগ বুঝে সরাসরি কথা বলুন।

See also  বউ বা স্ত্রীকে যেভাবে আদর করবেন জেনে নিন

২৩. ভুল করে ফেললে নিজেই আগে ‘দুঃখিত’ বলুন। ভুলের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তিখণ্ডন করতে যাবেন না।

২৪. স্বামী-স্ত্রীর ভুল বোঝাবুঝিতে তৃতীয় কাউকে জড়াবেন না, এমনকি নিজের মা-বাবাকেও না। সুযোগ বুঝে ঠান্ডা মাথায় সরাসরি কথা বলুন। নিজেরা আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করুন।

২৫. স্বামী-স্ত্রীর একান্ত বিষয়গুলোতে যেচে পড়ে সিদ্ধান্ত দিতে যাবেন না বা কৌতূহলী হবেন না। তারা সহযোগিতা চাইলে পরিস্থিতি বুঝে পরামর্শ দিন।

২৬. বাইরে খেতে যেতে হলে আগেই স্বামী/স্ত্রীকে জানান। এতে তার মানসিক প্রস্তুতিটা সুন্দর হবে।

২৭. অফিসের নির্দিষ্ট সময়ের পরও ব্যস্ততা থাকলে বাসায় প্রথম সুযোগেই জানিয়ে রাখুন। এতে দুশ্চিন্তা ও ভুল বোঝাবুঝি কমবে।

২৮. দাম্পত্য জীবনের শুরুতেই নিজের আয় সম্পর্কে স্ত্রীকে সুস্পষ্ট ধারণা দিন। এতে সমঝোতা বাড়বে। অযৌক্তিক প্রত্যাশাও কমে যাবে। সামর্থ্যের বাইরে খরচ করা থেকে একে অন্যকে বিরত রাখুন।

২৯. স্বামীর কাছ থেকে আপনার প্রত্যাশাকে সবসময় যুক্তিসঙ্গত সীমার মধ্যে রাখুন। অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত খরচের চাপ সৃষ্টি করে স্বামীকে দুর্নীতি করতে বাধ্য করবেন না।
কারণ দুর্নীতি পরকীয়ার দরজা খুলে দেয়।

৩০. স্ত্রীর অর্থ ও সম্পদ ব্যয়ে তার স্বাধীনতাকে হরণ করবেন না।

৩১. সাংসারিক খরচের পাশাপাশি স্ত্রীকে সাধ্যমতো ও নিয়মিত হাতখরচ দিন।

৩২. কর্মজীবী স্বামী-স্ত্রী একে অপরের কাজের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকুন। পরিবারকে দেয়া সময় সমমর্মিতায় ভরিয়ে রাখুন।

৩৩. পরস্পরের পছন্দ ও আগ্রহের বিষয় সম্পর্কে জানতে সচেষ্ট থাকুন।

৩৪. স্বামী/স্ত্রীর চেয়ে নিজেকে ডিগ্রি, সামাজিক মর্যাদা, বিত্ত-বৈভবে শ্রেষ্ঠ মনে করবেন না। বিবাহিত জীবনে আপনারা অংশীদার। আপনার সাফল্যে স্বামী/স্ত্রীর যে-কোনো ভূমিকা অকপটে স্বীকার করুন।

See also  নিজের ব্যক্তিত্ব যে নিজেই বের করবেন তার উপায় জেনে নিন

৩৫. যদি বুঝতে পারেন-স্বামী আজ বেশি পরিশ্রম করে এসেছেন কিংবা স্ত্রীকে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়েছে, তাহলে তার প্রতি সহানুভূতিশীল ও সমমর্মী হোন।

৩৬. শত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজেরা একান্তে কথা বলার সময় বের করে নিন।

৩৭. স্বামী বা স্ত্রীকে প্রতিদিন অন্তত একবার বলুন- ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’।

৩৮. সুযোগ থাকলে একসাথে খাবার খান ও প্রার্থনা করুন।

৩৯. মাঝেমধ্যে পরস্পরকে প্রয়োজনীয় বা প্রিয় কিছু উপহার দিন।

৪০. মা ও শাশুড়ি, বাবা ও শ্বশুরকে সমদৃষ্টিতে দেখতে চেষ্টা করুন।
দেবর-ননদ বা শ্যালক-শ্যালিকাকেও আপন ভাইবোন মনে করুন।

৪১. গর্ভে সন্তান এলে তাকে কাঙ্ক্ষিত মনে করুন ও স্রষ্টার প্রতি শোকরগোজার হোন। পৃথিবীতে তার আগমনকে হাসিমুখে বরণ করে নিন।

৪৩. সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিন। নিয়মিত চেক-আপ-এর ব্যবস্থা করুন। এসময় তার খিটখিটে মেজাজ বা সাংসারিক কাজে অপারগতাকে সহজভাবে নিন। তাকে মানসিকভাবে উৎফুল্ল রাখুন। পরিবারের সবাই তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।

৪৪. নিঃসন্তান হলে হীনম্মন্যতায় ভুগবেন না। সন্তান না হওয়াকে স্রষ্টার দেয়া শাস্তি মনে করবেন না। সর্বাবস্থায় শোকরগোজার থাকুন।

৪৫. বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই যদি জানতে পারেন যে, স্বামী/স্ত্রী মাদকাসক্ত, সমস্যায় জর্জরিত, মানসিক রোগী বা এমন কোনো রোগে আক্রান্ত যা আপনি মেনে নিতে পারবেন না, তাহলে দ্রুত আপনার পরিবারকে জানান। তাদের সাথে পরামর্শ করুন।
আসলে মাদকাসক্ত/সমস্যায় জর্জরিত/জটিল রোগগ্রস্ত অথবা মানসিক রোগীর প্রতি মমতা প্রদর্শন আর তার সাথে সংসার করা এক কথা নয়।
________________
সূত্র: শুদ্ধাচার (মহাজাতক)