
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার আলাইয়াপুর ইউনিয়নে মাদ্রাসা ছাত্রীকে গণধর্ষণ, ভিডিও ধারণ ও অপহরণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদী ও ভুক্তভোগীর মা বিউটি আক্তার ও স্থানীয় আলাইয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান, মামলার স্বাক্ষী মোজাম্মেল হোসেন সহ ৬ জনের বিরুদ্ধে জোর পূর্বক দেহ ব্যবসা করানোর অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে বেগমগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বাদী হয়ে এ মামলাটি দায়ের করেন।
বিউটি নিজের মেয়েকে (১৭) জোর পূর্বক যৌন ব্যবসায় বাধ্য করে।আর এ কাজে সহযোগীতা করতো স্থানীয় আলাইয়াপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামলীগের সহ সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান।
এদিকে ঘটনার প্রতিবাদে ও বিচারের দাবীতে মঙ্গলবার বিকালে আলাইয়াপুর ৬নং ওয়ার্ড নাফিতের পোল এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও হীরাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মনববন্ধন করে স্থানীয় এলাকাবাসী।
জানা যায়, মামলায় ভুক্তভোগীর মা বিউটি আক্তার গত বৃহস্পতিবার রাতে তার মেয়েকে (১৭) ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে ছবি ধারণ ও অপরহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চার জনের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে আসামী ফয়সাল, সাইফুল ইসলাম ইমন ও জোবায়েরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকার সাভারের পূরগাও এলাকার রুবি নামের একজনের বাসা থেকে ভিকটিমকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন ভিকিটিম অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালত-৩ এ বিচারকের কাছে সেচ্ছায় ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করেন।
পুলিশ জানায়, জবানবন্দি ও মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জানা গেছে ২০১৮ সালে ভিকটিম ধীতপুর দারুল উলুম দাখিল মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণিতে পড়া লেখা করতো। ২০১৭ সাল থেকে ২৮ ডিসেম্বর ২০২০ সাল পর্যন্ত ভিকটিমকে দিয়ে তার মা বিউটি আক্তার জোরপূর্বক টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা করাতো। বিভিন্ন লোকের থেকে টাকা নিয়ে নিজের মেয়েকে কখনো নিজ বাড়ীতে, কখনো ঢাকা বা চট্টগ্রামে যৌন কাজের জন্য পাঠাতো বিউটি। বিষয়টির প্রতিবাদ করলে কয়েকবার ভিকটিমের হাত পা বেধে মারধর করে বিউটি। স্থানীয় চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানও তাকে দেহ ব্যবসা করানোর জন্য বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেত। আগের মামলার সাক্ষী ও বর্তমান মামলার আসামী মোজ্জামেল হোসেন বিউটিকে টাকা দিয়ে ঘরে এসে ওই ছাত্রীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতো। একরাতে মোজাম্মেলের সাথে যৌন কাজে লিপ্ত হলে স্থানীয় ফয়সাল ও জোবায়ের দেখে তাদের দুইজনের বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে। পরে মোজাম্মেলকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে ওই রাতে ভিকটিমকে গণধর্ষণ করে ফয়সাল ও জোবায়ের। পরে বিউটি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনিসুর রহমানের থেকে টাকা নিয়ে তার বাড়ীতে পাঠায় ওই ছাত্রীকে। চেয়ারম্যান আনিস নিজ বাড়ীতে রেখে একাধিকবার ধর্ষণ করে ভিকটিমকে।
পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) রুহুল আমিন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ভিকটিম ও গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের জবানবন্দির আলোকে পতিতাবৃত্তির উদ্দেশ্যে ওই ছাত্রীকে শারীরিক নির্যাতন, আটক রেখে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্যকরণ, অবৈধভাবে অর্থের বিনিময়ে যৌন শোষণ ও স্থানান্তরিত করে যৌনকর্ম করার অপরাধে বিউটি ও চেয়ারম্যানসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মানব পাচার ও দমন আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত বিউটিকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। চেয়ারম্যান আনিসসহ মামলার অপর আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বেগমগঞ্জ থানার ওসি কামরুজ্জামান সিকদার জানান, মাদ্রাসাছাত্রীকে ধর্ষণ, অপরহণ, নগ্ন ভিডিও ধারণের ঘটনায় আগে দুটি ও মানব পাচার দমন আইনে আরও একটি মামলা হয়েছে। মামলায় মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
Source:: https://kholabarta24.com/