
কেগেল ব্যায়ামের বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিন – সবচেয়ে বেশী উপকার হয় যৌন দূর্বলতার চিকিৎসায়
কেগেল ব্যায়াম (Kegel Exercise) মূলত পেলভিক ফ্লোর বা “শ্রোণিচক্রের পেশি” শক্তিশালী করার জন্য করা হয়। এই ব্যায়ামটি পুরুষ ও নারী – উভয়ের জন্যই উপকারী। নিচে কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা এবং গবেষণালব্ধ ফলাফল সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:
✅ কেগেল ব্যায়ামের উপকারিতা:
👩 নারীদের জন্য:
- প্রসবের পরে পেশি পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
- ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স (প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা) নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
- যোনিপথের পেশি শক্তিশালী হয় — যৌন জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
- অন্তঃসত্ত্বা নারীদের জন্য প্রসব সহজ করতে সাহায্য করতে পারে।
- পেলভিক অর্গান প্রোল্যাপ্স (গর্ভাশয় বা মূত্রথলি নিচে নেমে আসা) প্রতিরোধে সহায়ক।
👨 পুরুষদের জন্য:
- ইরেকটাইল ডিসফাংশন (লিঙ্গোত্থান সমস্যা) কমাতে সহায়তা করে।
- প্রিম্যাচিওর ইজাকুলেশন বা অকাল বীর্যপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে।
- প্রোস্টেট সার্জারির পরে ইউরিনারি কন্টিনেন্স ফিরিয়ে আনতে সহায়ক।
- যৌন জীবনের মান উন্নত করে।
🔬 গবেষণালব্ধ তথ্য (Evidence from Research):
- International Urogynecology Journal (2020) অনুযায়ী:
- নিয়মিত কেগেল ব্যায়াম করলে নারীদের প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
- The Journal of Urology (2013):
- প্রোস্টেট অপারেশনের পর যেসব পুরুষ কেগেল ব্যায়াম করেছেন, তাদের ইউরিন কন্ট্রোল দ্রুত ফিরেছে।
- Cochrane Review (2012):
- পেলভিক ফ্লোর ব্যায়াম, বিশেষ করে গাইডেড বা ফিজিওথেরাপি সহ হলে, ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স কমাতে কার্যকর।
- Sexual Medicine Reviews (2015):
- কেগেল ব্যায়াম পুরুষদের যৌনক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে — বিশেষ করে যারা ইরেকটাইল ডিসফাংশনের সমস্যায় ভোগেন।
⚠️ সতর্কতা ও পরামর্শ:
- ব্যায়ামটি ঠিকভাবে করতে না পারলে উপকারের বদলে তেমন ফল মিলবে না।
- সঠিকভাবে শিখে নেয়া দরকার — প্রয়োজনে একজন ফিজিওথেরাপিস্ট বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
- পেশি ভুলভাবে চেপে রাখলে (যেমন, পেট বা ঊরুর পেশি) সঠিক উপকার পাওয়া যায় না।
🧘♀️ কিভাবে করবেন কেগেল ব্যায়াম?
- মূত্রধারার সময় যেই পেশি দিয়ে থামাতে হয় — সেটিই কেগেল পেশি।
- সেই পেশি দিনে ৩-৪ বার, প্রতি বার ১০-১৫ সেকেন্ড চেপে রেখে ছাড়ুন।
- দিনে ৩ বার ১০–১৫ বার রেপিটিশন করাই আদর্শ।
কেগেল ব্যায়াম করলে সমস্যার ধরণ, শারীরিক অবস্থা, বয়স, নিয়মিত অনুশীলন, এবং পেশিগুলোর দুর্বলতার মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ফলাফল আসার সময় ভিন্ন হতে পারে।
তবে সাধারণভাবে গবেষণা ও ক্লিনিকাল অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটা গড় সময়সূচি নিচে দেয়া হলো:
🕒 সময়সীমা – কতোদিনে উপকার পাওয়া যায়?
সমস্যা | গড় সময় | বিস্তারিত |
---|---|---|
ইউরিনারি ইনকনটিনেন্স (প্রস্রাব ধরে রাখতে না পারা) | ⏳ 4–12 সপ্তাহ | নিয়মিত অনুশীলনের ফলে প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের উন্নতি দেখা যায়। |
প্রিম্যাচিউর ইজাকুলেশন (অকাল বীর্যপাত) | ⏳ 8–12 সপ্তাহ | নিয়মিত কেগেল করলে পিসি মাশল (pubococcygeus muscle) নিয়ন্ত্রণে আসায় সময় নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। |
ইরেকটাইল ডিসফাংশন (ED) | ⏳ 8–16 সপ্তাহ | রক্তপ্রবাহ এবং পেশি নিয়ন্ত্রণে উন্নতি ঘটলে যৌন ক্ষমতা বাড়ে। |
প্রসব পরবর্তী পেলভিক ফ্লোর দুর্বলতা | ⏳ 6–12 সপ্তাহ | নারীরা প্রসবের পরে দ্রুত পেশি শক্তি ফিরিয়ে আনতে পারেন। |
✅ উপকার দ্রুত পেতে কিছু টিপস:
- নিয়মিত করুন: দিনে অন্তত ৩ বার, প্রতি বার ১০–১৫ বার সঙ্কোচন করুন।
- সহজ ব্যায়াম ভাববেন না: এটি মনোযোগ দিয়ে করতে হয়, নইলে ভুল পেশি কাজ করে।
- সহজে ফল পেতে গাইডলাইন মেনে চলুন – প্রয়োজনে ফিজিওথেরাপিস্টের পরামর্শ নিন।
- অতিরিক্ত চাপ দেবেন না – অন্য পেশি যেমন পেট, ঊরু বা নিতম্ব শক্ত করবেন না।
⚠️ মনে রাখবেন:
- কারো কারো ক্ষেত্রে ২–৩ সপ্তাহেই সামান্য উন্নতি দেখা দিতে পারে, আবার কারো ক্ষেত্রে পুরোপুরি উন্নত হতে ৩–৬ মাসও লাগতে পারে।
- যদি ৩ মাস কেগেল করার পরেও কোনো উন্নতি না দেখেন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।