এ কী চলছে কুমিল্লার আবাসিক হোটেলগুলোতে?

এ কী চলছে কুমিল্লার আবাসিক হোটেলগুলোতে?

আদিমযুগ প্রায় শেষ হয়ে গেলেও আদিম অনেক কাজ সমাজে রয়ে গেছে। এরই একটি হল পতিতাবৃত্তি। পৃথিবীর প্রাচীনতম এই পেশা সব দেশেই কম-বেশি স্বীকৃত। কিন্তু এ পেশা এদেশে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই সুযোগে দেশের আবাসিক হোটেলগুলোর পোয়াবারো অবস্থা। এই দিক থেকে পিছিয়ে নেই কুমিল্লার নামী-দামী অধিকাংশ আবাসিক হোটেলগুলো। ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা দিলে দেহ মেলে এসব আবাসিক হোটেলে! সাথে সাথে মেলে ভয়াবহ যত যৌনব্যাধি।
কুমিল্লার নামী-দামী অধিকাংশ আবাসিক হোটেলে নিত্য-নতুন কৌশলে চলছে দেহব্যবসা। এই ব্যবসার সঙ্গে কোন কোন হোটেল মালিকের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ মিলেছে। তবে বেশিরভাগক্ষেত্রেই হোটেলের ম্যানেজার, দালাল ও হোটেলবয় মিলেই কৌশলে পরিচালনা করছে পতিতা ব্যবসা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের হোটেলগুলোর সিংহভাগই পতিতা ব্যবসায় জড়িত রয়েছে। এছাড়াও কুমিল্লার অন্যান্য উপজেলার আবাসিক হোটেলে পতিতাবৃত্তির সন্ধান পাওয়া গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানায়, শহরের দেহ ও মাদক ব্যবসায় জড়িত আবাসিক হোটেল গুলো হচ্ছে শাসনগাছার হোটেল ঝিনুক, আল মাসুম, আল শোভা, কান্দিরপাড়ের হোটেল অবকাশ, হোটেল রফিক, আলেখারচরের হোটেল নিউ ময়নামতি, হোটেল আল ফালাহ, আল আমিন হোটেল, ময়নামতি হোটেল, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঝাগুড়ঝুলিতে হোটেল বৈশাখী, স্টেশন রোডের সবুজ রেস্ট হাউজ, চকবাজারের আগ্রাবাদ, আরজু, নিদ্রাবাগ, সবুজ বাংলা, মনোহরপুরের আজমীর রেষ্টহাউজ, পদুয়ার বাজারের পদ্মা, অতিথি, তাজ, সাগরিকা, বিলাস, যমুনা , সম্রাট, ইসলামিয়া ইত্যাদি হোটেলগুলো।

এসব আবাসিক হোটেলে ১২ থেকে ৩০ বা ততোধিক বছর বয়সের মেয়েরা অশ্লীল ও অসামাজিক এ কার্যসিদ্ধে লিপ্ত। হোটেলগুলোর একেকটি কক্ষে ১০/১২ জন করে মেয়ে থাকে। খদ্দের এলে পছন্দসই মেয়েকে নিয়ে ভিন্ন রুমে চলে যায়। এসব মেয়ের কেউ ৮/১০ জন খদ্দের পায়, আবার কেউ ২/১ জন, কেউবা অনেক দিন ব্যর্থ হয়েই ঘরে ফেরে।
তবে অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কুমিল্লা জেলার ছোট-বড় প্রায় শ খানেক হোটেলে প্রতিদিন প্রায় হাজার খানেকের মতো খদ্দেরের যৌনসুখ নিবারণে নিয়োজিত রয়েছে প্রায় দেড় হাজারের বেশি মেয়ে। হোটেলভিত্তিক এই পতিতা বাণিজ্যে মাসিক আয় অন্তত কয়েক লাখ টাকা।

See also  পাবনা শহরের অভিজাত আবাসিক হোটেল ড্রীম প্যালেস থেকে ১১ জন আটক

এ ধরনের আবাসিক হোটেল রয়েছে প্রায় শ খানেক এবং রেস্ট হাউস রয়েছে অনেক। তবে সঠিক কোন হিসাব না থাকলেও হোটেলে দেহব্যবসা করে বহু মেয়ের জীবিকা নির্বাহ সহজ হয়ে গেছে।

পুলিশ-প্রশাসনের কিছু অসৎ কর্মকর্তা, কিছু অসাধু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্থানীয় মাস্তানসহ এক শ্রেণীর প্রভাবশালী ও পেশিশক্তির অধিকারী লোকের ছত্রছায়ায় নির্বিঘ্নে এ ব্যবসা পরিচালিত হয়ে আসছে বলেও অনুসন্ধানে জানা গেছে। বিগত তিন বছর আগের তুলনায় বর্তমানে এ ব্যবসার প্রসারও ঘটেছে অনেকটা অস্বাভাবিক হারে।

কারা কিভাবে ভাগিয়ে আনে পতিতাদের:
এক শ্রেণীর দালালের মাধ্যমে অনেক সুন্দরী ও যুবতী মেয়ে এ ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। কিছু শিক্ষিত ও কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীও জড়িয়ে পড়েছে বলে জানা গেছে। দৈহিক চাহিদা নিবারিতেও কেউ কেউ আবার এ পেশাকে বেছে নিয়েছে বলে খোঁজ পাওয়া গেছে। তবে সিংহভাগ দেহপসারিণীই শুধু অর্থ উপার্জন এবং জীবিকা নির্বাহের তাগিদেই এ পেশাকে অতি সহজ বলে মেনে নিয়েছে। বিভিন্ন বস্তি ও মহল্লার কিছু দালাল টাইপের লোক বয়স্ক মহিলাদের মাধ্যমে ললনা সন্ধান করে হোটেলে সাপ্লাই দেয়। নানাভাবে যৌনপেশায় নিযুক্ত মহিলাদের একাংশের সাথে কিছু লোকের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের মাধ্যমে হোটেলসহ বিভিন্ন বাসা-বাড়ি-অফিসে কলগার্ল হিসাবে মেয়ে সরবরাহ হয়ে থাকে। আর স্কুল- কলেজের অনেক মেয়ে বখাটে ছেলেদের মাধ্যমেই হোটেলের ম্যানেজারদের সাথে যোগাযোগ করে জড়িয়ে পড়ে এ পেশায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহিলা কলেজের এক ছাত্রী জানান, বছর দেড়েক আগে তার এক বান্ধবীর লাইফ স্টাইল দেখে সন্দেহ হওয়ায় এ ব্যাপারে নানাভাবে জানার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে জানতে পারেন, তার বান্ধবী শহরের একটি আবাসিক হোটেলে এই পেশায় নিয়োজিত এবং শুধু চিত্তসুখানুভবের টানে কলেজের আরও একজন ছাত্রীকে সে এ কাজে জড়িয়ে অবশেষে পেশাদার হোটেলসুন্দরীর তালিকায় সম্পৃক্ত করেছে।
খদ্দের কারা:
সাধারণত হোটেলসুন্দরীদের খদ্দের হয়ে থাকেন ড্রাইভার, কিছু ব্যবসায়ী, নেশাগ্রস্ত ব্যক্তি ও মস্তান শ্রেণীর লোক। আবার কিছু সাধারণ মানুষও যৌন সুখানুভবের জৈবটানে হোটেলসুন্দরীদের কাস্টমার হয়ে গমন করেন এসব হোটেলে। নিতান্ত কম অর্থের বিনিময়ে বহু ষোড়শী ও যুবতী মেয়ে ইজ্জত বিলিয়ে দিতে বাধ্য থাকে। দেহপসারিণী অনেকেই আবার লেখাপড়ার কিছুই জানে না । একজন যৌনকর্মী দৈনিক ৮/১০ জন খদ্দেরের মনোরঞ্জনে নিবিষ্ট হয়। আর একজন খদ্দেরকে এ সামান্য আনন্দভোগে কম করে হলেও ব্যয় করতে হয়২৫০ থেকে ১৫০০ টাকা।

See also  কক্সবাজার আবাসিক হোটেলে ও সমুদ্র সৈকতে পতিতা দিয়ে দেহ ব্যবসা

টাকার ভাগ বন্টন:
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ২৫০ টাকা ৩টি ভাগ হয়ে থাকে। এর মধ্যে দেহপসারিণী পায় ৮০ টাকা, দালাল ২০ টাকা, হোটেলের ভাড়া ১০০ টাকা। আর ৫০ টাকা জমা থাকে স্টাফ ফান্ডে। উল্লেখ্য, এসব আবাসিক হোটেলে কর্মচারীদের বেতন নামমাত্র। সংশ্লিষ্ট কাজে সম্পৃক্ত ম্যানেজার মাসে ৬০০-১৫০০ টাকা ও হোটেলবয় ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০০ টাকা বেতনে কাজ করে। মালিক থেকে পাওয়া এই বেতনের বাইরে অসামাজিক কাজের বেতন ও বকশিশ থেকে মোটা অংকের টাকা আয় হয়। স্টাফ ফান্ডের জমা টাকা প্রতি সপ্তাহে একবার হিসাব হয়ে ম্যানেজার ও বয়সহ সকল স্টাফ ভাগ করে নেয়।

কালেভদ্রে প্রশাসনিক অভিযান:
পুলিশ ও প্রশাসনের নাকের ডগায় এ অবৈধ ব্যবসা চলছে। এ ধরনের অশ্লীল কার্যকলাপের জন্য আমাদের দেশে কোন শক্ত আইনের প্রয়োগ নেই বলে পুলিশ মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন হোটেলে অভিযান চালিয়ে দোষীদের গ্রেফতার করলেও পরক্ষণে আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বেরিয়ে এসে পুনরায় এ পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় পুলিশ-প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিলেও রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপে সেসব পদক্ষেপ কার্যকর হয় না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, আবাসিক হোটেলগুলো থেকে সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশের কিছু অসৎ কর্মকর্তা মাসিক মাসোহারা নিয়ে থাকে। পুলিশ কর্মকর্তাদের বডিগার্ড,  ড্রাইভাররা মাসে ২০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত বকশিশ নিয়ে থাকেন এসব হোটেল থেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক আবাসিক হোটেল ম্যানেজার জানান, পুলিশ ম্যানেজ হলে এ ব্যবসা চলে, নচেৎ চলে না। তবে কিছু সাংবাদিককে মাসিক মাসোহারা দিতে হয়। এক্ষেত্রে পুলিশই অনেক সাংবাদিক চিহ্নিত করে তাদের খুশি রাখতে বলেন। এ ধরনের খরচ মালিক কর্তৃপক্ষই ম্যানেজ করেন। অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের কিছু অসাধু সদস্যকে প্রায় লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করতে দেখা যায়, এবং অনেক সময় হাতে নাতে অসামাজিক কাজে লিপ্ত থাকা আসামীকে ধরে রফা-দফার মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে অনেক।

See also  রংপুরের পীরগঞ্জে বিনোদন কেন্দ্র “আনন্দ নগর” এ রমরমা দেহ ব্যবসা

২৪ ঘন্টাই চলে পতিতা ব্যবসা:
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যৌনকর্ম চলে ২৪ ঘন্টাই।তবে অধিকাংশ হোটেলেই রাতে ললনারা থাকে না। সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত চলে হোটেলভিত্তিক দেহব্যবসা। হোটেলের দেহপসারিণীরা সপ্তাহে ২/৩টি হোটেল পরিবর্তন করে। টানা একই হোটেলে কাজ করার মধ্যে কিছু ঝুঁকি ও দেনদরবারে সমস্যা হয় বলেই মূলত হোটেল পরিবর্তন করে মেয়েরা।

নানা যৌনরোগে আক্রান্ত হচ্ছে উভয়ই:
যৌন সংক্রান্ত যত প্রকার রোগ-ব্যাধি ছড়ায় এবং যারা সংক্রামিত হয় তাদের সিংহভাগই আবাসিক হোটেলের যৌনকর্ম থেকেই আক্রান্ত। আবাসিক হোটেলের অধিকাংশ যৌনকর্মীই জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত। দেশের স্বাস্থ্যখাতের ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টিতে অবাধ যৌনাচার ব্যাপকভাবে দায়ী। শুধু হোটেলে নয়, রাজপথ থেকে শুরু করে বাসা-বাড়ি পর্যন্ত এবং অভিজাতদের মধ্যে কলগার্ল সংস্কৃতি চালু হওয়ায় বহু নারী-পুরষ যৌনরোগে আক্রান্ত। এইচআইভি এইডস-এর বিস্তার ঘটছেও আশঙ্কাজনক হারে। এমন অবাধ ও নির্বিঘ্নে হোটেলভিত্তিক এ অশ্লীল ব্যবসা চলতে থাকলে সিফিলিস, গনোরিয়াসহ এইড্স-এর মতো ভয়াবহ ও জীবনধ্বংসী রোগের বিস্তার ঘটতে পারে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকেই অভিমত দিয়েছেন।

Source:: https://www.cumillardhoni.com/