খদ্দের নেই, অর্ধাহারে-অনাহারে যৌনকর্মীদের দিন যাপন

খদ্দের নেই, অর্ধাহারে-অনাহারে যৌনকর্মীদের দিন যাপন

আমার মেয়ের বয়স দেড় বছর। মেয়ে হওয়ার পর তিন মাস ঠিক মতো দুধ ও কাপড় কিনে দিতে পেরেছি। করোনার কারণে প্রায় ১৩ মাস যাবত মেয়ের নতুন জামা ও দুধ কিনে দিতে পারি না। সুজি খাওয়াই। বর্তমানে সুজি কেনার টাকাও থাকে না। অন্যের কাছ থেকে টাকা চেয়ে সুজি কিনে দিতে হচ্ছে। লকডাউনে গাড়ি বন্ধ, খদ্দেরও আসে না। সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। এতো কষ্ট গত ১২ বছরেও করিনি।

কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের কান্দাপাড়ার যৌনপল্লীর এক যৌনকর্মী। ১২ বছর ধরে যৌনপল্লীটিতে বসবাস করা এ যৌনকর্মী জানান, আগে প্রতিদিন ৮০০-১২০০ টাকা আয় করতেন তিনি। করোনার কারণে খদ্দের কম থাকায় প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হতো। এখান থেকে যা আয় করতেন তা দিয়ে ঘর ভাড়া, সন্তানের খরচ, খাবার ও ব্যক্তি খরচ বাদ দিয়ে তার বাড়িতে টাকা পাঠাতেন। প্রায় ১৩ মাস যাবত করোনার কারণে খদ্দের সংখ্যা কম। সবশেষ দুই সপ্তাহ যাবত লকডাউনের কারণে খদ্দের একেবারেই নেই। খদ্দের না আসায় আয় উপার্জনও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন তিনি অর্ধাহারে-অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তার মতো টাঙ্গাইল শহরের কান্দাপাড়া যৌনপল্লীর প্রায় ৭০০ কর্মী খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছেন। আবার অনেক কর্মী ঘরভাড়া দিতে না পাড়ায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।

২০০ বছরের পুরোনো কান্দাপাড়া যৌনপল্লীটি ৩০২ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এর ৫৯টি বাড়িতে প্রায় ৭০০ যৌনকর্মী রয়েছেন। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের ২০ মার্চ জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতি জনকে ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে এই পল্লী লকডাউন ঘোষণা করে। এর পর ঈদুল ফিতরের আগে প্রতি সদস্যকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নগদ ৫০০ করে টাকা দেওয়া হয়।

গত সোমবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, লকডাউনের কারণে কান্দাপাড়া যৌনপল্লীর প্রতিটি অলিগলির রাস্তা ফাঁকা। প্রতিবেদককে দেখে কয়েকজন যৌনকর্মী এগিয়ে আসেন ত্রাণসামগ্রী পাওয়ার আশায়।

See also  ময়মনসিংহ রমেশ সেন রোড গাঙ্গিনারপাড় পতিতালয় ও আবাসিক হোটেল দেহ ব্যবসা । Mymensingh

অন্য একজন যৌনকর্মী বলেন, ‘দেহ ব্যবসা ছাড়া অন্য কোনো কাজ শিখিওনি পাড়িও না। এই কাজ করে নিজের সব খরচের পাশাপাশি বাড়ির বৃদ্ধা বাবা মায়ের ওষুধ কেনার জন্য মাসে সাড়ে তিন হাজার করে টাকা দিতে হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ যাবত তাদের টাকাও দিতে পারি না। তারা টাকা চেয়ে কান্না করে। আমি টাকা না দিতে পেরে কান্না করি। সরকারি কোনো সহযোগিতা পেলে রোজার মাসটা কোনোভাবে কাটাতে পারতাম।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নারী নেত্রী বলেন, ‘শুধু কর্মীরা মানবেতর জীবনযাপনই করছে না। আমরাও খুব কষ্টে দিন পার করছি। করোনার ভয়ে এমনিতেই মানুষ আসে না। লকডাউনের কারণে আরো আসে না। সব মিলিয়ে খুব কষ্টে আছি।’

নারী মুক্তি সংঘের আকলিমা আক্তার আখি বলেন, ‘এই যৌনপল্লীর সদস্যরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। লকডাউনের কারণে খদ্দের না থাকায় বাড়ি ভাড়া, খাবার খরচসহ ব্যক্তিগত খরচ যোগাতে না পেরে প্রায় ৫০ জন কর্মী পল্লী ছেড়ে তাদের বাড়িতে চলে গেছে।’

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আজাদ বলেন, ‘লকডাউনের জন্য অন্যান্য পেশার মতো যৌনকর্মীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কাজেই যৌনকর্মীসহ অন্যান্য পেশাজীবীদের সরকারি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন।’

টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি বলেন, ‘যৌনপল্লীসহ অন্যান্য পেশার যারা মানবেতর জীবন যাপন করছে সরকারিভাবে তাদের সহায়তা দেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল-৫ আসনের সাংসদ ছানোয়ার হোসেন জানান, যৌনকর্মীসহ আরো যারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে সোমবার থেকে প্রাথমিকভাবে ইফতার সামগ্রী পরিবেশন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও অন্যান্য সহায়তা দেওয়ারও প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

Source::  https://www.dhakatimes24.com/