উদ্ধারের পর আবারো ফিরে গেলেন যৌনপল্লীতে

উদ্ধারের পর আবারো ফিরে গেলেন যৌনপল্লীতে

দারিদ্র্যতা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে দিল না ২৪ বছর বয়সী এক তরুণীকে। দৌলতদিয়ার যৌনপল্লী হতে উদ্ধার হওয়ার পর তিনি আবারো ফিরে গেলেন তার অন্ধকার জগতে।

ওই তরুণী রাজবাড়ী সদর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকার এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। ৬ বছর আগে এই অন্ধগলিতে পা রেখেছিলেন তিনি।

জানা গেছে, মেয়েটিকে যৌনপল্লীতে জোর করে আটকে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হচ্ছে এমন অভিযোগ করে তাকে উদ্ধারের জন্য রাজবাড়ীর পুলিশ সুপারের নিকট আবেদন করেছিলেন ওই তরুণীর মা। এর প্রেক্ষিতে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ শুক্রবার সকালে তাকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বেবী বাড়িয়ালীর বাড়ি হতে উদ্ধার করে। এরপর খবর দেওয়া হয় তার পরিবারের লোকজনকে। থানায় ছুটে আসেন অসহায় বৃদ্ধ বাবা ও ছোট ভাই।

থানায় পুলিশ ও সাংবাদিকদের সামনে উদ্ধার হওয়া তরুণী বলেন, ‘আমাকে কেউ পল্লীতে জোর করে আটকে রাখেনি। আমি সেখানে ভালোই ছিলাম। আবারো সেখানে ফিরে যাব।’

কেন ফিরে যাবেন জানতে চাইলে ওই তরুণী বলেন, ‘বাড়িতে আমার ৬ বছর বয়সী একটা প্রতিবন্ধী ছেলে রয়েছে। এছাড়া বৃদ্ধ বাবা-মা ও ছোট ভাই আমার উপর নির্ভরশীল। আমি বাড়িতে গেলে সবাইকে না খেয়ে মরতে হবে।’

তরুণী আরো বলেন, ‘অল্প বয়সে বাবা-মা একটা ছিচকে চোরের সঙ্গে আমাকে বিয়ে দিয়েছিল। প্রায়ই সে ধরা পড়ে মারধর খেত। সে আমাকে খুব নির্যাতন করতো। খুবই মানসিক অশান্তির মধ্যে ছিলাম। ভেবেছিলাম বাচ্চা হলে সে ঠিক হয়ে যাবে।কিন্তু প্রতিবন্ধী বাচ্চা হওয়ার পর সে আমার উপর অত্যাচার আরো বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেই পল্লীতে গিয়ে নাম লেখাই। গত ৬ বছরে একে একে উম্বার, হালিমুন, সুমি, লালমিয়া ও বেবির বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করছিলাম।’

তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিন ধরে দৌলতদিয়া ফকির পাড়া এলাকার একটা ছেলে তার কাছে আসা-যাওয়া করতো। সে মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী প্রকৃতির। সেই সম্ভবত আমার মায়ের খোঁজ করে তাকে দিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ করিয়েছে। তার ইচ্ছে আমাকে বিয়ে করার। কিন্তু তাকে বিয়ে করলে আমার জীবনটা আবারো অশান্তির মধ্যে পড়বে। সেই সাথে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে আমার পরিবার।

এদিকে তরুণীর বৃদ্ধ বাবাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি অসহায়ের মতো শুধু চেয়ে থাকেন। কোন কথাই বলেননি। এক পর্যায়ে পুলিশ মেয়েকে তার হাতে তুলে দিলে তিনি হাতে থাকা লাঠি ভর দিয়ে আস্তে আস্তে থানা থেকে বেরিয়ে যান।

এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল তায়াবীর জানান, পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা মেয়েটিকে থানায় নিয়ে আসি। তিনি আমাদের নিশ্চিত করেন যে তাকে কেউ জোর করে পল্লীতে আটকে রাখেনি। অভাব-অনটনের কারণে স্বেচ্ছায় সেখানে ছিলেন। তাকে তার বাবার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। সে প্রাপ্ত বয়স্ক। এরপর সে কোথায় যাবে সেটা একান্তই তার নিজের বিষয়।

Source:: https://www.ittefaq.com.bd/wholecountry/199106/

আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন

Be the first to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.


*