উচ্চশিক্ষিতরা পা বাড়াচ্ছেন অন্ধকার পথে

উচ্চশিক্ষিতরা পা বাড়াচ্ছেন অন্ধকার পথে

উচ্চশিক্ষিতরা পা বাড়াচ্ছেন অন্ধকার পথে

ঘটনাটি সম্প্রতি ঘটে রাত আনুমানিক ২টা। ঢাকার মগবাজারে অবস্থিত এক হোটেল থেকে পুলিশ আটক করে ৬ জন খদ্দেরসহ ৪ জন দেহপসারিণীকে। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে রমনা থানা পুলিশ জানতে পারে, আটককৃত ৪ জনের মধ্যে ২ জন একটি কলেজের, ১ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ১ জন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যার পূর্ব নাম শেরেবাংলা কৃষি ইনস্টিটিউট) ছাত্রী। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ আরো নিশ্চিত হয় যে, আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকা শহরের বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউজ এবং আবাসিক বাড়িতে অবস্থিত মিনি পতিতালয়ে টাকার বিনিময়ে দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। ঢাকায় অবস্থিত বিভিন্ন হোটেল, গেস্ট হাউজ এবং আবাসিক বাড়িতে (যেসব বাড়িতে দেহ ব্যবসা চলে) ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, শুধুমাত্র ঢাকা শহরে দেহ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজের প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্রী। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বদরুন্নেসা কলেজ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের মেয়েরা। সর্বনাশার পথে পথে এসব ছাত্রীর সরাসরি তত্ত্বাবধান করছে কমপক্ষে ৭ জন মক্ষিরাণী। এসব মক্ষিরাণীর অধীনে যেসব ছাত্রী কাজ করে প্রতিবারের অর্থ নগদে মিটিয়ে দেয়া ছাড়াও মাস শেষে তাদের নির্দিষ্ট অংকের টাকা দেয়া হয় বলে জানা গেছে। গুলশান-১ নম্বরে রয়েছে সা’ আদ্যাক্ষরের একটি গেস্ট হাউজ। এই গেস্ট হাউজে নিয়মিত যাতায়াত করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষকের মেয়ে। জানা গেছে, ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত উচ্ছৃখল ও বদস্বভাবের এই মেয়ে। বর্তমানে মডেলিং এবং এ্যাড ফার্মে চাকরির ছদ্মাবরণে গুলশান-বনানীর মতো অভিজাত এলাকায় দেহ ব্যবসায়ে লিপ্ত। ইতোমধ্যে সে ক্যাম্পাসে গড়ে তুলেছে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ক্যাম্পাসেরই বিভিন্ন বিভাগের এবং সাভার এলাকার আরও কিছু উচ্চাভিলাষী মেয়ে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের মাস্টার্সের এক ছাত্রীকে গত বছরের মার্চ মাসে মোহাম্মদপুরের নূরজাহান রোডের একটি বাড়ি থেকে স্থানীয় যুবকরা আটক করে থানায় সোপর্দ করে। স’ আদ্যাক্ষরের আলোচিত ছাত্রীটির ক্যাম্পাসে বহুল আলোচিত ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনার ভিকটিমের খাতায় তার নাম ছিলো বলে জানা গেছে। গত ২৬ জুলাই রাতে টঙ্গীর আশুলিয়ায় টহল পুলিশের হাতে ধরা পড়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্রী। লা’ আদ্যাক্ষরের ছাত্রীটিকে ঢাকার এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় আশুলিয়া বেড়িবাঁধের কাছে গাড়ির মধ্য থেকে আটক করে টহল পুলিশের দল। এছাড়া সদ্যপরীক্ষা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া এক ছাত্রীর যোগাযোগ রয়েছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এক শিল্পপতির ব্যক্তি সহকারীর সঙ্গে। স’ আদ্যাক্ষ নমের ছাত্রীটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের অন্তর্ভুক্ত একটি বিভাগের ছাত্রী ছিলো। একই অভিযোগ পাওয়া গেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের কতিপয় ছাত্রীর বিরুদ্ধে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের এক কর্মচারী জানায়, হলের কমপক্ষে ১০/১৫ জন মেয়ে এসব কাজের সঙ্গে জড়িত। এর প্রমাণ পাওয়া যায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার কাকরাইলে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটককৃত মেয়েদের পরিচয় দেখে। পুলিশী অভিযানে আটককৃত মোট ১২ জন মেয়ের মধ্যে ৫ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলের, ২ জন ইডেনের, ১ জন বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের মেয়ে বলে জানা গেছে। এছাড়া গত ২৫ মে পুরান ঢাকার নবাবপুরে অবস্থিত একটি আবাসিক হোটেল থেকে খদ্দেরসহ আটক করা হয় ‘ক’, ‘স’ এবং ‘এ’ আদ্যাক্ষরের তিন ছাত্রীকে। আটককৃতরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত-মৈত্রী হলের ছাত্রী বলে থানা সূত্রে জানা যায়। একই ধরনের আরো অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে ইডেন কলেজ, বদরুন্নেসা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে; যারা ছাত্রীর লেবাসে দেহ ব্যবসা করে বেড়াচ্ছে ঢাকা শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, গেস্ট হাউজ এবং আবাসিক বাড়িতে গড়ে ওঠা মিনি পতিতালয়ে। শুধুমাত্র জৈবিক চাহিদা নিবৃত্ত করতে নয়, সাথে বাড়তি আয়ের জন্যও অনেকে এ পথ বেছে নিয়েছে। আবার অনেকে বিভিন্ন প্রলোভনের ফাঁদে আটকা পড়ে এ পথে আসতে বাধ্য হয়েছে। কেস স্টাডি ১ ঢাকার একটি নামকরা কলেজের দর্শন অনার্সের ছাত্রী। ধরা যাক তার নাম সুমা। উচ্চ মাধ্যমিকে ভালো রেজাল্ট করা রুমা পড়াশোনায় সিরিয়াস। এক সময় খেয়াল করে দেখলো, সে সবসময় একজন অধ্যাপকের কাছে ভালো নাম্বার পাচ্ছে না। যত ভাল করেই লিখুক, যতই সুন্দর ভাষা ব্যবহার করুক তিনি যেন কিছুতেই সন্তুষ্ট নন। প্রথমে সুমা ধারণা করেছিল এই অধ্যাপক হয়ত কোনো বিশেষ কারণে তাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু পরে দেখলো ব্যাপারটা আসলে উল্টো। আসলে ভদ্রলোক তাকে সবার চেয়ে একটু বেশীই পছন্দ করেন। মাঝে মাঝে টিউটোরিয়াল খাতা ফেরত দেবার নামে, ডেকে পাঠান নিজের রুমে, তারপর সময় কাটান অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তায়। একদিন স্ত্রীর অবর্তমানে সুমাকে বাসায় যাওয়ার প্রস্তাবও দিয়ে বসলেন। রাজি না হয়ে উপায় ছিল না সুমার। কারণ একটা পেপারে খারাপ নম্বর পেলে সমস্যা। অধ্যাপক সাহেব সেদিন সুমার অসম্মতি সত্ত্¦েও জোর করে তাকে ভোগ করেন। এরপর থেকে প্রায়ই তাদের মধ্যে এই অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে আসছিল। সময়ের বিবর্তনের ধারাবাহিকতায় আজ সুমা প্রথম শ্রেণীর কলগার্ল। কেস স্টাডি ২। তানিয়া (ছদ্মনাম) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী। অবসর সময়ে কাজ করে একটি অ্যাড ফার্মে। পেশার প্রয়োজনে পুরুষ সহকর্মীদের সাথে বন্ধুর মত সহজভাবে মেলামেশা করে। তার ধারণা এ পেশায় ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিভেদ রেখা খুব প্রকট নয়। একবার একটা অ্যাডের কাজে সহকর্মীদের সাথে তাকে যেতে হয়েছিল চট্টগ্রামে। রাতে থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল হোটেলে রাতে অ্যাড ফার্মের মালিক কর্তৃক হোটেল কক্ষে জোরপূর্বক ধর্ষণের শিকার হয় সে। পরবর্তীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা প্রকাশ করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বারবার অ্যাড ফার্মের মালিকের ভোগের শিকার হয় তানিয়া। তানিয়া এখন দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতির রক্ষিতা হিসেবে জীবন যাপন করছে।
কেস স্টাডি ৩। বিশ্ববিদ্যালয় পেরুনো বড় লোক বাবার আদরের কন্যা জিনিয়া (আসল নাম নয়)। অবসর কাটাতে চাকরি নেয় ঢাকার একটি বহুজাতিক কোম্পানীতে। বসের সেক্রেটারি হলেও জিনিয়াকে অফিসের অনেক খুঁটিনাটি কাজ করতে হয়। প্রতিটি কাজ সে দায়িত্ব সহকারে করে। জিনিয়ার বস ভাল মানুষ। প্রতিটি বিষয় সুন্দর-সহজভাবে আলোচনার মাধ্যমে বুঝিয়ে দেন। কাজের চাপ বেশি হলে অফিস ছুটির পরও মাঝে মাঝে থাকতে হয় জিনিয়াকে। বসকে সহযোগিতা করতে হয়। এক সন্ধ্যায় অফিস জনশূন্য। সে আর বস ছাড়া কেউ নেই। সেদিন খুলে পড়ল বসের মুখোশ। নির্লজ্জভাবে তিনি জিনিয়ার শরীরে হাত দিলেন। জড়িয়ে ধরলেন পেছন থেকে। সরাসরি কু-প্রস্তাব দিয়ে বসলেন। বিনিময়ে তিনি আশ্বাস দিলেন জিনিয়ার চাকরি স্থায়ীকরণের এবং পদোন্নতির।
জিনিয়া কোনো কথা বলার আগেই বসের বাহুর নিচে পিষ্ট হলো শরীর। জরিপ ও অনুসন্ধানে উদ্বেগের ছবি … উপরের কয়েকটি ঘটনার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে। সমাজে নারীদের ভোগ্যরূপে প্রতিষ্ঠিত হবার চিত্র। এই শ্রেণীর নারীকে এখন বিভিন্ন কাজের জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের মাধ্যমে চলছে সচিবালয়ের ফাইল ব্যবসা। ক্ষমতাবান অনেক আমলা এদের পাবার জন্য নির্ধারিত সময়ে পাড়ি জমান গুলশান, বনানী ও ডিওএইচএস-এর মতো অভিজাত এলাকায়।
সমাজের নামীদামি ব্যক্তিরাই সব নারীর গডফাদার। এদের ইচ্ছামাফিক যখন-তখন যার তার শয্যাসঙ্গীনি হতে হয় এসব সোসাইটির গার্লদের। ঢাকা শহরের বিভিন্ন ধরনের অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মারাত্মকহারে বেড়ে চলছে অবৈধ দেহ ব্যবসা। পত্রপত্রিকায় এ সম্পর্কে বহু লেখালেখি হলেও কর্তৃপক্ষের কোনো মাথাব্যথা নেই। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে প্রায় সব ক’টি আবাসিক এলাকায় যৌন ব্যবসার আস্তানা গড়ে উঠেছে। এসব আস্তানায় স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ছাত্র পরিচয়ধারীদের রেখে ব্যবসা চলছে। কোনো কোনো স্থানে তারা স্বামী-স্ত্রীর পরিচয়ে বাস করে। কথিত স্বামীর কথিত স্ত্রীদের জন্য জন্য খদ্দের। সংগ্রহ করে থাকে বিভিন্ন জায়গা থেকে। যারা দেহ বাণিজ্য করে তাদের চলাফেরা হাবভাব দেখে বোঝার উপায় নেই। বেশভূষায় এরা অনেকেই হাইফাই সোসাইটিকেও হার মানায়। এসব মেয়েদের সাথে শহরের নব্য ধনবান-প্রভাবশালী ব্যক্তিদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। এদের যাতায়াত ওপরতলায় হওয়ায় এরা সবসময় থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। সাম্প্রতিককালে ঢাকা শহরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছুসংখ্যক মেয়ে এই অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ করার শর্তে গুলশান এলাকার নারী ব্যবসার এক দালাল এর সত্যতা স্বীকার করে বলে, আমার সংগ্রহেই ঢাকা, ইডেন ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭টি মেয়ে রয়েছে। কথার সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় ঢাকায় অবস্থিত ‘দি অপিনিয়ন নামক একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপের ফলাফল দেখে। সংস্থাটি তাদের সাম্প্রতিক এক জরিপ প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ঢাকা মহানগরীর ২১১টি আবাসিক হোটেল, গেস্টহাউস এবং ম্যাসেজ পার্লারে নারী দেহে ব্যবসা চলছে। এসব ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছে ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বি এম কলেজ, নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি এবং লালমাটিয়া মহিলা কলেজের প্রায় দেড় শতাধিক মেয়ে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক রাশিদুল হাসান। উদ্বেগের সাথে বলেন, বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে যেন ১৫ থেকে ৭ বছরের কিশোরীদের এ পেশায় ভেড়ানো হচ্ছে তেমনি কাস্টমার হিসেবেও অপেক্ষাকৃত কম বয়সী কিশাের-তরুণদের প্রলুব্ধ করা হচ্ছে, যা বর্তমানে এসে পৌঁছেছে ভয়ানক । বিশ্বস্ত সূত্রে এ ফাঁস, নগরীতে এ ধরনের কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী বেশ কিছু সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব রয়েছে। যার সাথে জড়িয়ে আছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা, হোটেল ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী গ্রুপ প্রধানসহ অনেকে। মাসিক চুক্তিভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় তারা পরিচালনা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের নারীভোগ্য কর্মকাণ্ড।
ঢাকার শাহবাগ এলাকায় কথা হয় মামুন নামে পঁচিশোর্ধ্ব দালালের সাথে। বেশ আস্থার সাথেই বলল, তার হাতে অনেক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মেয়ে রয়েছে। চাইলেই ম্যানেজ করে দিতে পারবে। এর সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য দালাল তৎক্ষণাৎ ‘ব’ আদ্যাক্ষর নামের একজন কলগার্লের মোবাইল নম্বর (০১৭২৩৫২…) দিয়ে তার কথার সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার অনুরোধ জানায়। পরবর্তীতে নাম, পেশা গোপন রেখে মামুনের দেয়া মোবাইল নম্বরে রিং করলে আলোচ্য কলগার্ল ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে অবস্থিত একটি বাড়ির ঠিকানা দিয়ে সেখানে যোগাযোগ করার জন্য বলে। অভিজাত এলাকায় অন্ধকারের ছায়া নগরীর কূটনৈতিক এলাকায় অবস্থিত একটি অভিজাত গেস্ট হাউজের চিত্র পর্যবেক্ষণ করে দেখ যায়, সেখানে প্রতিদিন গড়ে ১০/১৫ জন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণী খদ্দেরদের মনোরঞ্জন করে। ঘন্টা প্রতি তাদের ন্যূনতম চার্জ ২ হাজার টাকা। এক্ষেত্রে গেস্ট হাউজটির দৈনিক আয় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকা। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বললেন, এতেও লাভ থাকে না। গড়ে প্রতিদিন ৫-৭ হাজার টাকা খেয়ে নেয় বিভিন্ন ব্যক্তি। সকলকেই ম্যানেজ করতে হয়। গেস্ট হাউজের সাথে চুক্তিবদ্ধ কলগার্লদের একটি রেজিস্টারও রয়েছে। তাতে চুক্তিবদ্ধ কলগার্লদের ছবিও সংরক্ষণ করা আছে। রেজিস্টারে উল্লেখিত নামগুলো ছদ্মনাম বলেই জানালেন হোটেল সংশ্লিষ্টরা। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীসহ অভিজাত পরিবারের কন্যা ও গৃহবধূ এবং বিনোদন জগতের অনেকেই তাদের সাথে বিভিন্ন সময়ে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানান এর ম্যানেজার। এক প্রশ্নের জবাবে ম্যানেজার জানান, শুধুমাত্র সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনগুলোতে (সাধারণ সপ্তাহে ২ দিন) চুক্তিবদ্ধ বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা এখানে আসে। এছাড়া নামীদামি খদ্দেরদের চাহিদা অনুযায়ী আমরা কলগার্লদের ডেকে আনি। ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে ঢাকা শহরে যেসব কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা সরাসরি এসব কর্মকাণ্ডের সাথে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছে এদের সংখ্যা প্রায় দেড় শতাধিক। শহরে ৬ জন মক্ষীরাণীর অধীনে প্রায় ৪০/৪৫ জন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে সরাসরি দেহব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। এদের মধ্যে লিলি নামের এক মক্ষীরাণীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১২ জন মেয়ে। এ সকল মেয়েদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন, ইডেন মহিলা কলেজের ২ জন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ জন, লালমাটিয়া মহিলা কলেজের ১ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ জন ছাত্রী। মক্ষীরাণী নিশার। তত্ত্বাবধানে রয়েছে ৭ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের ১ জন, ঢাকার নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির ১ জন, ইডেন কলেজের ২ জন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন। মক্ষীরাণী বিউটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ৫ জন ছাত্রী। এদের অধিকাংশই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী বলে জানা গেছে। মক্ষীরাণী নীলার তত্ত্বাবধানে রয়েছে ৬ জন ছাত্রী। এদের মধ্যে ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজের ১ জন, ঢাকা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ জন। করে, ইডেন কলেজের ১ জন, হোম ইকনোমিক্স কলেজের ১ জন এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের ১ জন ছাত্রী। এছাড়া মক্ষীরাণী পারভীন, নাজমা ও লিপির প্রত্যেকের অধীনে রয়েছে ৩/৪ জন করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে। উল্লিখিত মক্ষীরাণীদের মধ্যে পারভীন ও নাজমার অবস্থান মোহাম্মদপুর এলাকায়। লিপির অবস্থান রামপুরা এলাকায়। মক্ষীরাণী নিশির অবস্থান গুলশান-২-এ। লিলির অবস্থান বনানী বারিধারা এলাকায় এবং বিউটির অবস্থান নিউ ইস্কাটন আবাসিক এলাকায়। এছাড়া এসব মক্ষীরাণীদের সংগ্রহে আছে গৃহবধূ, অভিনেত্রী, মডেল তারকা থেকে শুরু করে ডিজাইনার পর্যন্ত। দেহ ব্যবসায়ে রাখঢাক ক্রমেই কমে আসছে। প্রকাশ্যেই চলছে দরদাম ও কলগার্ল চুক্তি। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও মোড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এ ব্যবসার দালাল। এদের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কারবার।
বিভিন্ন মহল‘ম্যানেজ করে বাড়িয়ে তুলছে ব্যবসা পুলিশসহ। … আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের সকলেই এ কারবার নিয়ে অবগত। সবার হিসেব বুঝিয়ে দিলে কোনো ঝামেলা থাকে না। এ ব্যবসার মূল কারবারই দলালকেন্দ্রিক। সাম্প্রতিক সময়ে সংযোজিত হয়েছে মোবাইল কালচার’। দালালরা কাস্টমার ও কলগার্লের মধ্যে মোবাইল টেলিফোন নাম্বারসহ যোগাযোগ করিয়ে দেয়। তারপর। উভয়ের আলাপচারিতার মাধ্যমে নিষ্পত্তি ঘটে বাকি কাজ। এক্ষেত্রে বিশ্বস্ততা ও গোপনীয়তা রক্ষা করা হয় চরমভাবে। অনেক কলগার্ল নিজেই গ্রাহকদের সঙ্গে সরাসরি মোবাইলের মাধ্যমে যোগাযোগ রক্ষা করছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে বিভিন্ন ব্যক্তির ট্যুর পার্টনারের চাহিদা বেশি। দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন জনের ট্যুর পার্টনার হিসেবে ডিমান্ড করা হয় শিক্ষিত স্মার্ট তরুণীদের। যা মেলাতে কষ্ট হলেও দুলর্ভ নয়। যৌনসঙ্গের পাশাপাশি নানামুখী কাজে এক্ষেত্রে কলগার্লদের চার্জও মিলে যায় বেশি। এ ধরনেরই একটি ট্যুরের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছে লিমা (ছদ্মনাম)।
লিমা ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের এমএ অধ্যয়নরতা। লিমা জানায়, আমার তখন অনার্স ফাইনাল পরীক্ষা চলছিলো। হঠাৎ এক রাতে মামী (লিমা যার অধীনে দেহব্যবসা করছে) মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠায় দেশের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর সঙ্গী হয়ে সিঙ্গাপুর যেতে হবে, তিনদিনের জন্য। প্রথমে পরীক্ষার কথা চিন্তা করে আমি তাকে সরাসরি না করে দেই। দ্বিতীয় দিন আবার অনুরোধ। আমি বড় অংকের অর্থের বিনিময়ে যেতে রাজি আছি বলে জানিয়ে দেই। ২০০০ সালের ৪ আগস্ট আমি সেই ব্যবসায়ীর সঙ্গে সিঙ্গাপুর রওনা দেই। সেখানে ৪ দিন, ৩ রাত আমি তার সাথে ছিলাম। বিনিময়ে পেয়েছি ২৫ হাজার নগদ টাকা, ৮টি শাড়ি, স্বর্ণের চেইন, ঘড়িসহ আরো প্রায় ৫০ হাজার টাকার উপহার। এখনো সেই ব্যবসায়ী মাঝে মাঝে আমার কাছে আসে। একই অভিমত ব্যক্ত করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী। গুলশানে অবস্থিত একটি গেস্ট হাউসে সপ্তাহে ২ দিন নিয়মিত যাতায়াত করে। ‘প’ আদ্যাক্ষরের ছাত্রীটির ছবি গেস্ট হাউসের রেজিস্ট্রি খাতায় রয়েছে। গেস্ট হাউসে আরো যারা নিয়মিত যাতায়াত করে তাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলের সুমি, কুয়েত-মৈত্রী হলের বিলকিস, শামসুন্নাহার হলের মন্টি, বিজলী, ইডেন মহিলা কলেজের রুনা, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের সাথী প্রমুখ। তবে রেজিস্ট্রি খাতায় লেখা নামগুলো তাদের প্রকৃত নাম নয় বলে জানালেন গেস্ট হাউসের কেয়ার টেকার : কাম-ম্যানেজার। তিনি আরো জানান, ছাত্রী ছাড়াও অভিজাত এলাকার গৃহবধূর নিয়মিত ফেয়ার গার্ডেনে যাতায়াত করে। অনুরোধের প্রেক্ষিতে এবং নাম-ঠিকানা গোপন রাখার স্বার্থে তিনি তামান্না নামক একজন গৃহবধূর সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। তামান্নার মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে তার এ পথে আসার কাহিনী। একজন তামানার কাহিনী, ময়মনসিংহের এক অভিজাত পরিবারে আমার জন্ম। সরকারি চাকরিজীবী বাবার ৫ ছেলেমেয়ের মধ্যে আমিই ছিলাম সবচেয়ে সুন্দরী এবং স্বাস্থ্যবতী। এক ঝলক দেখলেই তীব্র আকর্ষণ জাগবে না এমন লোক এলাকায় খুবই কম ছিলো। ফলে স্কুল ছেড়ে কলেজে পা দেয়ার সাথে সাথে অসংখ্য বন্ধু জুটে যায় আমার। বন্ধুদের সাথে অবাধ মেলামেশায় এক সময় বাধা দেন আমার পিতা। তাদের নিষেধ সত্ত্বেও আমার আড্ডার গণ্ডি কমাতে ব্যর্থ হই। এরই মাঝে আমার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে ঠিক করে ফেলে। এইচএসসি পরীক্ষার আগেই আমার বিয়ে হয়ে যায় ঢাকার একজন গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে। আমার স্বামীর বয়সের সঙ্গে আমার বয়সের পার্থক্য ছিলো প্রায় ১৫ বছরের। বাসর রাতেই আমার প্রধান কাজ হলো স্বামীর সারা দেহ ম্যাসেজ করা। যৌবনের আমার কোনো প্রয়োজন ছিলো না আমার স্বামীর কাছে। ইতোমধ্যে সে যথেষ্ট ভোগ করছে। আর কি দরকার? এখন শুধু খেদমত ও একটু চোখের তৃষ্ণা নিবারণ।
মাঝে মধ্যেই আমার সারা শরীরে হাত বুলানো ছাড়া তার যেন অন্য কোনো দরকার নেই। তিন মাস, ছয় মাস, বছর এভাবে কেটে গেল। অসহ্য হয়ে উঠলাম আমি শরীরী তৃষ্ণায়। এভাবে কি জীবন কাটানো যায়? এরই মাঝে পরিচয় হলো আমার সামনের ফ্ল্যাটের ভাবির সাথে। বয়ড়া আমার চেয়ে ৫-৭ বছরের বড় হলেও দেখে তা বোঝার উপায় নেই। ভাবির স্বামী মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ডাক্তারী পেশায় কর্মরত। ৮ বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাবির ছোট্ট সংসার। পরিচয়ের সূত্র ধরেই ঘনিষ্ঠতা। হঠাৎ একদিন ভাবি জানালো তার পরিচিত একজন বন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে গুলশানে একটি পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। তার সঙ্গে যাওয়ার জন্য আমাকে অনুরোধ করলো। প্রথমে অমত করলেও পরে ভাবীর কথায় রাজি হই। এছাড়া আমার স্বামী তখন ব্যবসা সংক্রান্ত কাজে ঢাকায় না থাকায় যেতে আমার জন্য তেমন কোনো সমস্যা হলো না। নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে আমরা হাজির হলাম যথাস্থানে। আমাদের যাওয়ার আগেই আমন্ত্রিত অতিথিদের আগমনে হলঘর পরিপূর্ণ। ভাবী আমাকে নিয়ে একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে রাত আনুমানিক ২টার দিকে শুরু হলো নাচের অনুষ্ঠান। যদিও আমি এ ধরনের পার্টিতে প্রথম তবুও আমার আগ্রহ ছিলো এ ধরনের কালচার সম্বন্ধে। এরই মাঝে ভাবী এসে আমায় নিয়ে যায় হল রুমের এক কোণায় এবং পরিচয় করিয়ে দেয় শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মিঃ আলম (ছদ্মনাম) এর সাথে। ভাবী পরিচয় পর্ব শেষ করে অন্য এক ব্যবসায়ীর হাত ধরে চলে যায় নাচের আসরে। আলো-আঁধারী। মনোমুগ্ধকর পরিবেশে এক পর্যায়ে মিঃ আলম আমাকে আমন্ত্রণ জানায় তার সাথে নাচার জন্য। হ্যান্ডসাম, ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি লম্বার বলিষ্ঠ দেহের অধিকারী মিঃ আলমকে যতই দেখছিলাম ততই ভালো লাগার তীব্রতা আমাকে জড়িয়ে ধরছিলো।
তার সান্নিধ্য আমাকে ক্রমশই দুর্বল করে ফেলছিলো। এক সময় আমি অনুভব করলাম তার হাত আমার শরীরে বিচরণ করছে। ভালো লাগার আনন্দে আমি তাকে বাধা দিতে পারলাম না। এভাবে তার সাথে আমার অবৈধ সম্পর্ক শুরু এবং প্রায়ই আমরা এই গেস্ট হাউসে মিলিত হতাম। একদিন আলমের সাথে পূর্ব সিডিউল অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে আমি গেস্ট হাউসে উপস্থিত হই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর আলম আমাকে ফোন করে জানায় জরুরী কাজে আটকা পড়ায় সে আসতে পারবে না।

See also  খাগড়াছড়ির যেসব আবাসিক হোটেলে অবৈধ দেহ ব্যবসা চলে | Khagrachari Abasik Hotel

Source:: https://dailysangram.com/post/411499